ফেসবুকের অযৌক্তিক স্ট্রাইক: সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় আঘাত নাকি বাকস্বাধীনতার গলা চেপে ধরা?
গণমাধ্যম একটি জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিকতা মানে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, জনগণের কথা তুলে ধরা। অথচ আজ এই মহান পেশাটি যখন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে, তখন ফেসবুকের মতো বৃহৎ সামাজিক মাধ্যমগুলোর নীতিমালা আমাদের এ কাজের জন্য বাধা সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি Eye News BD-এর একটি নিউজ পোস্টে ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। পোস্টটি ছিল বাংলাদেশের একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস-এর সমাবেশ ও বক্তব্য নিয়ে। সমাবেশের বক্তব্যে দেশের সাম্প্রতিক খুন, রাহাজানি বন্ধ এবং জাতির মঙ্গলের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এটি কোনো উগ্রবাদী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সমাবেশ ছিল না; ছিল একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনা। তবু, ফেসবুক পোস্টটিকে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গের দোহাই দিয়ে সরিয়ে দেয়। এমনকি, Eye News BD-এর পেইজের মনিটাইজেশন বন্ধ করে দিয়ে রিচও দারুণভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
ফেসবুকের অন্যায্য সিদ্ধান্ত: একটি গভীর সমস্যার প্রতিচ্ছবি
ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-নির্ভর কনটেন্ট রিভিউ প্রক্রিয়া বারবার ভুল করে, আর সেই ভুলের বোঝা চাপে কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। আমরা যারা ফেসবুকে কাজ করি, আমাদের পরিশ্রম আর সততাকে মূল্যায়ন না করে একতরফাভাবে আমাদের কাজকে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ফেসবুক।
যে ঘটনা নিয়ে এই স্ট্রাইক, তার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুই সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন। বক্তব্যটি মিথ্যা বা সাম্প্রদায়িক নয়; বরং দেশের শান্তি ও কল্যাণের জন্য একটি সতর্কবার্তা। উল্লেখযোগ্য যে, এই সমাবেশের নিউজ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু ফেসবুক যেন সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করে একতরফা মনোভাব পোষণ করছে।
একটি কঠিন বাস্তবতা
Eye News BD একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। আমাদের আর্থিক কার্যক্রম মূলত ফেসবুক ও ইউটিউবের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। আমরা ভুয়া তথ্য প্রচার করি না, কিংবা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনো কাজ করিনা। তবুও আমাদের পেইজে এমন অযৌক্তিক স্ট্রাইক ফেসবুকের বেপরোয়া আচরণের পরিচয়।
গত কয়েক বছর ধরে, ফেসবুকের এই ধরনের আচরণ বারবার আমাদের স্বপ্ন এবং আশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালে আমাদের পেইজে এক বছর ধরে মনিটাইজেশন বন্ধ ছিল। সেই সময় আমাদের কর্মীদের অনেকে অন্য পেশায় যোগ দিতে বাধ্য হন। ফেসবুক বারবার "প্রযুক্তিগত ত্রুটি" বা "স্পেশালিস্ট পর্যালোচনা"-র অজুহাত দেখিয়েছে, কিন্তু কার্যত কোনো সমাধান দেয়নি।
গণমাধ্যমের প্রতি এভাবে অত্যাচার কেন?
ফেসবুকের এই মনোভাব গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য একটি বড় সংকেত। আমরা কি সামাজিক মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা দাবি করতে পারব না? সত্য বলার দায়ে যদি আমাদের প্রতিনিয়ত শাস্তি দেওয়া হয়, তবে গণমাধ্যম কীভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে?
বিশ্বের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো ফেসবুকও হয়তো মনে করছে যে, গণমাধ্যম তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, এ ধরনের আচরণ গণমাধ্যমের মৌলিক অধিকার হরণ এবং বাকস্বাধীনতার প্রতি একটি সরাসরি আঘাত।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ
আমাদের মতো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে। ফেসবুকের নীতিগত ভুল আমাদের কর্মীদের জীবিকা, আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের স্বপ্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি,
* আমাদের পেইজের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড স্ট্রাইকটি দ্রুত প্রত্যাহার করুন।
* গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য একটি স্পষ্ট এবং নিরপেক্ষ নীতিমালা প্রণয়ন করুন।
* আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভুলগুলো দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা নিন।
শেষ কথা
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, এবং আমরা গর্বিত এই পেশায় কাজ করতে পেরে। ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত আমাদের কাজে সহযোগিতা করা, বাধা নয়। বাকস্বাধীনতা এবং সাংবাদিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে ফেসবুককে তাদের নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
আমাদের কণ্ঠ রোধ করা হলে, দেশ, সমাজ, এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। আশা করি, ফেসবুক আমাদের কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এবং দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে।