মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০১/০১/২০২৫ ১০:১৮এ এম

নির্বাচন ও সংস্কারের দ্বৈরথ: ২০২৫ সালের নতুন চ্যালেঞ্জ

নির্বাচন ও সংস্কারের দ্বৈরথ: ২০২৫ সালের নতুন চ্যালেঞ্জ
২০২৪ সালটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাক্ষী হয়ে বিদায় নিয়েছে। নানা ঘটনা, বিশেষ করে ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন, দেশের রাজনীতিতে বিপ্লবী পরিবর্তনের সূচনা করেছে। নতুন বছর ২০২৫ এ পা দিয়ে, রাজনৈতিক আঙিনায় নতুন প্রত্যাশা এবং সম্ভাবনাগুলি উন্মোচিত হয়েছে। এই নতুন বছরটি শুরু হয়েছে নির্বাচন এবং সংস্কারের কঠিন দ্বৈরথের মাঝে, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তীব্রভাবে পাল্টে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছিল এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। তখন থেকেই দেশজুড়ে পরিবর্তনের আহ্বান শুরু হয়েছিল। এই বিপ্লবের পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে একটি নতুন কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। সরকার ইতোমধ্যে সংস্কারের একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে প্রশাসন, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠন করার প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

সরকারের এ উদ্যোগের মধ্যে, নির্বাচন এবং সংস্কারের তাগিদ মিলেমিশে এক নতুন দ্বৈরথ তৈরি করেছে। একদিকে, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাচ্ছে, অন্যদিকে, ছাত্র-জনতা এবং আন্দোলনকারীরা মনে করছেন যে, নির্বাচন আয়োজনের আগে সংস্কারের কাজগুলি সম্পন্ন হওয়া উচিত। বর্তমান সরকারের সামনে এরকম দ্বিমুখী চাপ সৃষ্টি হওয়ায়, ২০২৫ সালে তাদের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।

গত বছর জুলাই-আগস্টে সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এক নতুন পথ তৈরি হয়েছে। বিএনপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করেছে। তারা নতুন বছরে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে, পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংস্কারের দাবি আরো জোরালো হবে।

এছাড়া, জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। দলটি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, ২০২৫ সালে জনগণের পাশে থেকে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায়। জামায়াত নেতারা ২০২৪ সালের বিপ্লবের পর, নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে প্রস্তুত।

এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যা ছাত্র আন্দোলনকারীদের নিয়ে গঠিত, তারাও নির্বাচনী রাজনীতিতে আসতে যাচ্ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, যদিও কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, যদি এই দলটি জনগণের চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তবে তাদের ভূমিকা সীমিত থাকবে।

নতুন বছরের শুরুতে সরকারের সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তি এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সত্ত্বেও, নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এক নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করছে।

এ বছর দেশের জনগণের কাছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার করা হলেও, এটি বাস্তবায়ন করতে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা সমঝোতা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং, ২০২৫ সালটি হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা, যেখানে সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ