রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৯/১২/২০২৪ ০৯:৫২এ এম

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে সাবেক সেনাপ্রধানের বিস্ফোরক বক্তব্য!

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে সাবেক সেনাপ্রধানের বিস্ফোরক বক্তব্য!
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পর সেই ভয়াবহ ঘটনার পেছনের সত্য উন্মোচনে ফের মুখ খুলেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় ঘটে যাওয়া নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এতদিন ধরে এই ঘটনাকে ঘিরে ছিল অসংখ্য প্রশ্ন, যার উত্তর আজও অজানা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকার এবং ইউটিউব ভিডিওতে তিনি তুলে ধরেছেন বহু নতুন তথ্য।

২৬ ডিসেম্বর ফ্লোরিডা থেকে টেলিফোনে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মইন উ আহমেদ বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই ঘটনা ছিল সেনাবাহিনী ধ্বংসের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।” তিনি সরকারের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “জাতির প্রত্যাশা পূরণে কমিশন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে।”

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রথম বৈঠকে কমিশনের প্রধান এ.এল.এম ফজলুর রহমান ঘোষণা দেন, “হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যদি কোনো ষড়যন্ত্র থাকে, তা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।”

ঘটনার দিন এবং সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ:

জেনারেল মইন উ আহমেদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে তিনি বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন। বিদ্রোহের শুরুর মুহূর্তে কিছুই জানতেন না মেজর জেনারেল শাকিল। কিন্তু সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে মইন উ আহমেদ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

“আমি ৪৬ ব্রিগেডকে যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছিলাম,” বলেন মইন। কিন্তু বিদ্রোহীরা আগে থেকেই ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে তারা প্রতিরোধ শুরু করে। পিলখানার মূল গেটের কাছে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়, যেখানে চালক নিহত হন।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা:

মইন উ আহমেদ জানান, বিদ্রোহীরা প্রথমে আত্মসমর্পণের শর্ত হিসেবে সাধারণ ক্ষমার দাবি তোলে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দল পাঠান। যদিও মইন স্পষ্ট করে জানান, বিদ্রোহীদের কোনো শর্ত মেনে নেওয়া উচিত নয়। “অস্ত্রসমর্পণ ও আটককৃত অফিসারদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো শর্তই মেনে নেওয়া উচিত নয়,” বলেন তিনি।

বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দল যমুনায় আলোচনায় আসে। মইন তাঁদের মুখোমুখি হয়ে জানতে চান, কতজনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে প্রতিনিধি দলের নেতা ডিএডি তৌহিদ সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হন। এদিকে, বিদ্রোহীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও আত্মসমর্পণ করতে দেরি করে।

৩৩ ঘণ্টার রক্তাক্ত সমাপ্তি:

২৬ ফেব্রুয়ারি, বিদ্রোহীরা সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার খবর শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দুপুরে সেনাবাহিনী প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিলে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। রাত ১২টায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে একটি দল পিলখানায় প্রবেশ করে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে ৩৩ ঘণ্টার বিভীষিকা শেষ হয়।

জেনারেল মইন উ আহমেদ তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি অপারেশন চালাতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “যদি সেনাবাহিনী সময় মতো পূর্ণ স্বাধীনতা পেত, তবে এত প্রাণহানি হতো না।”

বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে বই প্রকাশ:

জেনারেল মইন উ আহমেদ ‘পিলখানায় পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি এই ঘটনার অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করবেন। বইটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে। তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য ফ্লোরিডায় অবস্থান করলেও এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা তাঁকে ব্যথিত করে।

জাতির জন্য শিক্ষা:

বিডিআর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়ঙ্কর অধ্যায়। এ ঘটনায় অনেক প্রশ্ন এখনও উত্তরহীন। মইন উ আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্য হয়তো জাতিকে সেই সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তদন্ত কমিশনের কার্যক্রম এবং তার বইয়ের মাধ্যমে জাতি হয়তো সেই অন্ধকার দিনগুলোর আসল রহস্য উন্মোচন করতে পারবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ