যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ একটি বিস্ফোরক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি এমন একটি বার্তা দিয়েছেন যা অনেক বিশ্লেষকই সরকার পতনের অঘোষিত হুমকি হিসেবে দেখছেন।
সরকার পরিবর্তন—এই শব্দটি রাজনৈতিকভাবে সঠিক না হলেও, যদি ইরানের বর্তমান নেতৃত্ব তাদের দেশকে আবার মহান করতে না পারে, তবে সেখানে নেতৃত্ব পরিবর্তন কেন নয়?
এই বক্তব্য ট্রাম্পের পক্ষ থেকে সরাসরি ইরান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার একটি কৌশলী প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটে হেগসেথ কিছুটা বিপরীত অবস্থান নিয়ে বলেন,
“এই সামরিক অভিযান সরকার পতনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান ঘটানোর প্রয়াস।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুই বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক কৌশল। রিপাবলিকান দলের একাংশ সরকার পরিবর্তনের বিপক্ষে থাকলেও ট্রাম্প নিজের নির্বাচনী ঘুঁটি সাজাতে পুরনো আগ্রাসী ভাষায় ফিরে যাচ্ছেন।
ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের মধ্যেই সরকার পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। ২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগ তুলে সরকার পরিবর্তনের পথে পা বাড়িয়েছিলেন। সেই অভিযানের ফলাফল আজও মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষরণ অব্যাহত রেখেছে।
ট্রাম্প নিজেও বুশ প্রশাসনের সেই যুদ্ধবাজ নীতির সমালোচক ছিলেন, কিন্তু আজ তিনিই যেন একই পথে হাঁটতে চাইছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি চাচ্ছেন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ সামাল দিতে একটি বহির্মুখী উত্তেজনা তৈরি করতে—যার লক্ষ্য ইরান।
ইরানে মার্কিন হামলার পরপরই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে। চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন,
এই আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। বেইজিং এর তীব্র নিন্দা জানায়।
রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন,
ওয়াশিংটন একপ্রকার প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। তারা স্পষ্টতই কূটনীতি নয়, আগ্রাসন চায়।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে বাহবা দিয়ে বলেন,
ইরানে হামলার জন্য ট্রাম্পকে বিশ্ববাসীর ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আলোচনার নামে একটি নাটক চলছিল মাত্র।”
তবে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইয়েদ ইরাভানি এসব বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের “ভুয়া অজুহাতে” আগ্রাসনের নিন্দা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম কমপক্ষে ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে তেলের সরবরাহ চেইনে বড়সড় সংকট দেখা দিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুরো হামলা এবং পরবর্তী বক্তব্য আসলে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ। তিনি নিজের নির্বাচনী সমর্থকদের কাছে একধরনের শক্তিশালী, দেশপ্রেমিক চিত্র তুলে ধরতে চাইছেন।
আরেকটি বিষয়ও উঠে এসেছে—আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার সেই আগের অবস্থান কি এখনো আছে? নাকি তারা আবার সেই পুরনো আগ্রাসী ভূমিকায় ফিরছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-সংক্রান্ত সর্বশেষ বার্তা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষা নয়, বরং তার ভবিষ্যৎ নির্বাচনী যুদ্ধের বার্তাও বটে। সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত নতুন উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালার মতো। এ অবস্থায় ইরান, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—ওয়াশিংটনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।



















