close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব চরমে, নতুন রাজনৈতিক দল আসছে যুক্তরাষ্ট্রে?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইলন মাস্কের একমাত্র প্রশ্নেই কেঁপে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি। মধ্যপন্থিদের জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এই প্রযুক্তি দানব। ট্রাম্পকে সরাসরি কটাক্ষ করে তিনি বললেন, “আমি থাকবো ৪০ বছর, ট..

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক ভূমিকম্পের সূচনা হতে চলেছে। এবার সে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রযুক্তি দানব ইলন মাস্ক। মার্কিন রাজনীতির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির ছকে বাঁধা ইতিহাসে এবার একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন মাস্ক। যার নাম হতে পারে—‘আমেরিকা পার্টি’।

গত ৫ জুন, নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) মাস্ক একটি জরিপ চালান তার ২২ কোটিরও বেশি অনুসারীর উদ্দেশ্যে। সেই জরিপে প্রশ্ন ছিল—“যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় কি আসেনি, যা দেশের মধ্যপন্থি ৮০ শতাংশ মানুষের প্রকৃত প্রতিনিধি হতে পারে?” তার এই প্রশ্ন মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

প্রতিক্রিয়া আসে বিস্ময়কর হারে। পরদিন মাস্ক জানান, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বিশাল একটি অংশ—প্রায় ৮০ শতাংশ—নতুন রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন। মাস্ক তখনই একজন অনুসারীর প্রস্তাবিত ‘আমেরিকা পার্টি’ নামটি সমর্থন করেন।

এই নামটি কিন্তু মোটেই এলোমেলো কোনো ভাবনা নয়। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (PAC) ‘আমেরিকা পিএসি’-এর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত এই নাম। উল্লেখযোগ্যভাবে, মাস্ক এই পিএসি-এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ একাধিক রিপাবলিকান প্রার্থীর জন্য প্রায় ২৩৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—ট্রাম্পকে এত বড় অঙ্কের সমর্থন দেওয়ার পর হঠাৎ মাস্কের এমন রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তনের কারণ কী?

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ এবং অতীতের ভুল সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়েই মাস্ক এখন রিপাবলিকানদের বিকল্প খুঁজছেন। এক পর্যায়ে মাস্ক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ট্রাম্প হয়তো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাড়ে তিন বছর থাকবেন, কিন্তু আমি থাকবো আরও ৪০ বছর!”

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই তিনি যেন রিপাবলিকান শিবিরকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন—তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের দিন শেষ হয়ে আসছে।

তবে শুধু ইচ্ছা প্রকাশ করলেই যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় না। বিষয়টি আইনি ও প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত জটিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচন আইন রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যালট অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য প্রতি অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্টসংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ, দলীয় প্রতিনিধি নিযুক্তি এবং প্রার্থিতার নানা ধাপে যেতে হয়। ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান, এমনকি লিবারটেরিয়ান পার্টির মতো অনেক তৃতীয় দল ইতোমধ্যে এইসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

এছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকেও রয়েছে বাধা। ইলন মাস্ক চাইলে ‘আমেরিকা পিএসি’ এর মাধ্যমে অনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে পারেন রিপাবলিকানদের জন্য। কিন্তু যদি তিনি নিজেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে যান, তাহলে ব্যক্তিগত অনুদানের সীমা হবে আইনত অনেক কম—মাত্র কয়েক লাখ ডলারের মধ্যে।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে—মাস্ক কি সত্যিই নতুন দল গঠনের দিকে এগোচ্ছেন, নাকি এটি শুধু একটি কৌশল?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলন মাস্ক যেভাবে প্রযুক্তি, ব্যবসা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়েছেন, তেমনি রাজনীতির ময়দানেও তিনি চমক দিতে পারেন। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ধাক্কা সামলাতে এখন অনেক রিপাবলিকানই নতুন কণ্ঠের অপেক্ষায়। মাস্ক সেখানে হতে পারেন ভিন্ন ধারার বিকল্প।

তবে এও সত্য, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল গঠন মানে শুধু একটি লোগো বা নাম নয়, বরং একটি আদর্শ ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন শক্তিশালী কাঠামো। মাস্ক যদি সত্যিই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের পথে এগিয়ে যান, তবে সেটি বর্তমান রাজনীতিকে আমূল পাল্টে দিতে পারে।

শেষ কথা, ট্রাম্প বনাম মাস্ক দ্বন্দ্ব যে এখানেই থেমে থাকছে না, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এখন অপেক্ষা—এই দ্বন্দ্ব কীভাবে বদলে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ভবিষ্যৎ মানচিত্র।

לא נמצאו הערות


News Card Generator