close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ট্রাম্প কি এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ট্রাম্পের হামলায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত টানতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ—যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়।..

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো সাম্প্রতিক হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, সারা বিশ্বে সৃষ্টি করেছে এক নতুন উদ্বেগের ঢেউ। ইরানের ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে এই আক্রমণে ব্যবহৃত হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন 'বাংকার বাস্টার' বোমা—যা মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত ধ্বংস করতে সক্ষম।

এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং ট্রাম্প নিজেই, তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সফলভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেছে এবং বর্তমানে মার্কিন বিমানবহর নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছে। একই পোস্টে তিনি একটি ওপেন সোর্স গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেন, ফোরদো স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিন্তু এই বিজয়ের ঘোষণা যতটা নাটকীয়, এর পরিণতি ঠিক ততটাই অনিশ্চিত ও ভয়ংকর হতে পারে—এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।

ন্যাশনাল ইরানি আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি এই হামলাকে আখ্যা দিয়েছেন "নাটকীয় ও উসকানিমূলক" এক পদক্ষেপ হিসেবে। আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না যে ট্রাম্প জানেন এর ফল কী হতে পারে। তাঁর কোনও কৌশলগত কিংবা কূটনৈতিক লক্ষ্য নেই। যদি ইরান এর প্রতিক্রিয়া দেয়, তাহলে তার জন্য কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনাও নেই।”

আবদি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের আড়ালে এমন এক পথে এগোচ্ছেন, যা কেবল যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। তিনি বলেন, “অনেকেই এখন মনে করছেন, ট্রাম্প যেন আমাদের সঙ্গে একপ্রকার খেলা খেলেছেন। আমরা তার প্রথম মেয়াদ থেকেই বুঝতে পারছিলাম, তিনি আসলে কী করতে চাচ্ছেন। যদি আমরা আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতাম, তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি হয়তো এড়ানো যেত।”

জামাল আবদি আরও বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ কেবল উত্তেজনা বাড়াবে। এতে করে কূটনৈতিক পথ আরও সংকুচিত হয়ে আসবে এবং তা এক সময় বড় সংঘাতের রূপ নিতে পারে। ইরান যদি পাল্টা জবাব দেয়, তাহলে ট্রাম্পের প্রশাসনের হাতে তেমন কোনো কৌশলগত বিকল্প নেই বলে আমার আশঙ্কা।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ট্রাম্প কীভাবে নিশ্চিত করবেন যে এই ঘটনার পরিণতি যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হবে না? তার সিদ্ধান্তে যে কোনো সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা মূলত ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার কৌশল হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান প্রদর্শনের প্রয়াস হিসেবে অনেকেই এটি দেখছেন। কিন্তু, বাস্তব কূটনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের সিদ্ধান্তের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি কোম প্রদেশে একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত, যা দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি বলে বিবেচিত। ইসরায়েল বহু বছর ধরে এই স্থাপনাকে চূড়ান্ত হুমকি হিসেবে দেখে আসছিল। এই স্থাপনাকে ধ্বংস করতে পারা যে কোনো দেশের জন্য কৌশলগতভাবে বড় অর্জন। তবে এর বিনিময়ে যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে, তাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান নিশ্চয়ই এমন এক হামলার জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তা হতে পারে সাইবার যুদ্ধ, হাইব্রিড অ্যাটাক বা সরাসরি সামরিক প্রতিশোধের মাধ্যমে।

এই মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া যায়। যদি ইরান পাল্টা আঘাত হানে, তাহলে বিশ্ব হয়তো আরও এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে।

বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি কি কৌশলী নেতার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন, নাকি এই পদক্ষেপ ইতিহাসে আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হবে—তা সময়ই বলে দেবে।

Nessun commento trovato