close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

টাক মাথায় চুল গজাতে গিয়ে ২ প্রকৌশলীর মৃত্যু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চুল গজানোর আশায় হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছিলেন দুই প্রকৌশলী। কিন্তু অপারেশনের পরই মৃত্যু। অস্ত্রোপচারের আগে কোনো মেডিকেল টেস্ট না করে ঝুঁকিপূর্ণ সার্জারি করেন এক ডেন্টিস্ট। ঘটনার মাসখানেক পর আদালতে আ..

চুল গজানোর আশায় মৃত্যু—হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের ভয়াবহ বাস্তবতা

 

একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানোর। উদ্দেশ্য ছিল টাক মাথায় নতুন করে চুল গজানো। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই হয়ে উঠল মরণফাঁদ। ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে চুল প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুই তরুণ প্রকৌশলী। চিকিৎসার নামে প্রতারণার ভয়ঙ্কর এই কাহিনিতে উঠে এসেছে চিকিৎসক পরিচয়ে এক ডেন্টিস্টের ভয়াবহ অনিয়ম এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার চিত্র।

এনডিটিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে এই ঘটনা ঘটে। দুই প্রকৌশলী একটি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। অস্ত্রোপচারের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তারা মৃত্যুবরণ করেন। যে চিকিৎসক এই জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সার্জারিটি পরিচালনা করেছিলেন, তিনি আসলে কোনো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা প্লাস্টিক সার্জন নন—তিনি একজন ডেন্টিস্ট, নাম অনুস্কা তিওয়ারি।

অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক অনুস্কা তিওয়ারি বিনা মেডিকেল টেস্টেই এই অস্ত্রোপচার করে বসেন। ফলে অপারেশনের পর দ্রুতই শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় রোগীদের মধ্যে। এক নিহত প্রকৌশলী বিনীত কুমারের স্ত্রী জয়া ত্রিপাঠীর বর্ণনায় উঠে এসেছে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, ১৩ মার্চ তার স্বামীর অস্ত্রোপচার হয় এবং পরদিনই তার মুখ ফুলে ওঠে। এরপর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রথমে কোনো সাড়া পাননি। অবশেষে রাত ১১টার দিকে সংযোগ হলে চিকিৎসক স্বীকার করেন, কোনো ধরণের প্রাথমিক মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই তিনি এই অপারেশন চালিয়েছেন। এরপর রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও পরের দিন, অর্থাৎ ১৫ মার্চ বিনীত কুমার মারা যান।

এই ভয়াবহ ঘটনার পরেও পুলিশ প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মৃত প্রকৌশলীর স্ত্রী ৯ মে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ কেন্দ্রে সরাসরি অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন। এরপরই পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা গ্রহণ করে এবং তদন্ত শুরু করে।

অভিযুক্ত চিকিৎসক গ্রেফতার, তদন্তে নতুন মোড়

সরকারি কৌঁসুলি দিলীপ সিং জানিয়েছেন, অনুস্কা তিওয়ারির বিরুদ্ধে ‘মেডিকেল নেগলিজেন্স’-এর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে তিনি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন করার কোনো বৈধতা রাখেন না। প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে, তিনি অপেশাদারিত্ব এবং গাফিলতির চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কাকাদেব থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়েছে।

অবশেষে দীর্ঘ কয়েক মাস পলাতক থাকার পর সম্প্রতি অনুস্কা তিওয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। শুনানিতে তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালত সরাসরি তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসাথে ক্লিনিকের লাইসেন্স, চিকিৎসা অনুমোদন এবং সার্জারির সময়কার মেডিকেল প্রস্তুতির বিষয়গুলোও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।

চুল গজানোর নামে মৃত্যুঝুঁকি: নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা

এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের নামে গড়ে ওঠা ছদ্ম চিকিৎসা ব্যবসার একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। চিকিৎসকের নাম, ডিগ্রি, অনুমোদন, অভিজ্ঞতা—সব কিছু যাচাই না করে এমন অস্ত্রোপচার করানো যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, কানপুরের এই ঘটনা তার জীবন্ত প্রমাণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি সঠিক চিকিৎসক ও অনুমোদিত স্থানে করানো না হলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এমনকি এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে, যেমনটি দেখা গেল এই ঘটনায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই ধরনের ভুয়া চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো কীভাবে কার্যক্রম চালায়? কে বা কারা তাদের পেছনে রয়েছে? সরকারি নিয়ন্ত্রণ কতটা দুর্বল হলে একজন ডেন্টিস্ট প্রকাশ্যে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারে?

Walang nakitang komento