বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৪ ফেব্রুয়ারি স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে স্টারলিংক সেবা চালুর ব্যাপারে আলোচনা করেন। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এসডিজির প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং স্পেসএক্সের কর্মকর্তাগণ।
এছাড়া, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট সেবা (এনজিএসও) চালুর জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে, যা বর্তমানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
স্টারলিংকের সুবিধা: ইন্টারনেট সেবা এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি
স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশের দূর্গম এলাকাগুলোতে উচ্চগতির, তারবিহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে। যেখানে ফাইবার অপটিক বা মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি পৌঁছানো কঠিন, সেখানে এই সেবা সহজেই পৌঁছে যাবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ইন্টারনেট সুবিধা পাবে, যা ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
এছাড়া, স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-লার্নিং, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং আধুনিক শিক্ষার সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। যার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, এবং ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন ব্যবসা ও অন্যান্য ডিজিটাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করতে পারবে।
স্টারলিংক ও বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বিপ্লব
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টারলিংক সেবা চালু হলে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাবে। এর মাধ্যমে ই-লার্নিং এবং ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। বিশেষ করে, গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ আধুনিক শিক্ষার সুবিধা পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “স্টারলিংক সেবা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত এবং এতে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংযোগের সুযোগ বাড়বে।”
স্টারলিংক ও নারীর ক্ষমতায়ন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্টারলিংকের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা এই সেবা ব্যবহার করে ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগে যুক্ত হতে পারবেন। এর ফলে, নারীরা স্বাবলম্বী হতে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হবেন।
গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে স্টারলিংকের ভূমিকা
স্টারলিংক বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। বিটিআরসি এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে গ্রামের ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলো অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে এবং শহর ও আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া কঠিন, তবে স্টারলিংকের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রামে সহজেই ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাবে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।”
স্টারলিংক এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশ
স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে চালু হলে, এটি শুধু প্রযুক্তি ও অর্থনীতির জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে একটি বড় পদক্ষেপ হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, এবং উদ্যোক্তা বিকাশে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, স্টারলিংক সেবা চালু হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের জনগণ আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা পাবে।