সরকারি প্রশাসনে বিপ্লবের শুরু! ১২১টি সুপারিশ বাস্তবায়নে ঝড়ের গতিতে কাজ শুরু..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১২১টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শৌচাগার থেকে শুরু করে ই-সার্ভিস পর্যন্ত, আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। জানুন, কোন কোন পরিবর্তন আপনার ..

গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ১২১টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে।

২০ জুন (শুক্রবার) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এই সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে রয়েছে জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি, যেখানে বলা হয়েছিল, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অবিলম্বে কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়ন হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ছয়টি মূল কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে।

সভায় জানানো হয়, পাঁচটি কমিশন থেকে পাওয়া ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

  • নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন: ৯টি

  • বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন: ৩৮টি

  • দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন: ৪৩টি

  • পুলিশ সংস্কার কমিশন: ১৩টি

  • জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন: ১৮টি

এই ১৮টি জনপ্রশাসন সুপারিশের মধ্যে ৮টি সহজে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

১. পেট্রোল পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট:
আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ নির্দেশনা জারি করবে এবং জেলা প্রশাসন তা বাস্তবায়নে তদারকি করবে।

২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ডায়নামিক করা:
ICT বিভাগ সকল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করে আপডেট তথ্য ও মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় ডেটা ইন্টারঅপারেবিলিটি সিস্টেম দুই মাসে বাস্তবায়ন করতে হবে।

  1. স্কুল ও কলেজে সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজিং কমিটি:
    মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ কার্যক্রমে নীতিমালা চূড়ান্ত করে এক মাসের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।

  2. কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেসরকারি পরিচালনা:
    স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো একটি সপ্তাহের মধ্যে সম্মেলন করে কৌশল নির্ধারণ করবে।

  3. গণশুনানি বাধ্যতামূলক করা:
    প্রতি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি আয়োজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

  4. তথ্য অধিকার আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন:
    তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ ও ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে সময়োপযোগী করে সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

  5. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কমিশনে রূপান্তর:
    বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ হিসেবে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

  6. ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা শক্তিশালীকরণ:
    সকল সরকারি সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একীভূত করে ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের নেতৃত্বে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (GIU) এর অধীনে একটি তদারকি টিম গঠন করা হবে। এই টিম সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

অন্যদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও তদারকি ভূমিকা পালন করবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নিজেদের বাস্তবায়ন টিম গঠন করে সময়ানুযায়ী অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রদান করবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিগত কয়েক মাসে সরকারের ৫৪টি মন্ত্রণালয় মোট ১,০৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন নয় — এটি একটি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার দিকচিহ্ন। যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পাচ্ছে। জনপ্রশাসনে এমন দৃষ্টান্তমূলক সংস্কার উদ্যোগ দেশের আগামী দিনগুলোর জন্য নতুন আশা ও সম্ভাবনার বার্তা বয়ে আনবে।

Inga kommentarer hittades