সরকারের ওপর ধীরে ধীরে চাপ বাড়াবে বিএনপি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইশরাক হোসেনের শপথ ও সাম্য হত্যার বিচার দাবিকে কেন্দ্র করে রাজপথে সক্রিয় বিএনপি। ধীরে ধীরে সরকারকে চাপে ফেলতে পরিকল্পিত কৌশলে মাঠে নামছে দলটি। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আদায়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের..

বিএনপি এখন আর হঠাৎ করে বড় কোনো কর্মসূচি দিয়ে চমকে দিতে চায় না—বরং ধাপে ধাপে, পরিকল্পিতভাবে সরকারকে কোণঠাসা করতে চায় দলটি। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের দাবি এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার—এই দুই ইস্যুকে সামনে রেখে দলটি রাজপথে নামতে শুরু করেছে।

এই কর্মসূচিগুলোর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট কৌশল। সরকারকে প্রকাশ্য সংঘাত না দেখিয়ে বরং নানামুখী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করছে বিএনপি। গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে—এই আন্দোলন ধীরে ধীরে তীব্রতর হবে, যেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন ঘোষণার চাপ বাড়ে।

ইশরাক ও সাম্য: বিএনপির আন্দোলনের নতুন দুই মুখ

সদ্য আলোচিত দুই ইস্যু—ইশরাকের শপথ এবং সাম্য হত্যার বিচার—কে কেন্দ্র করে দলটি মাঠে সক্রিয় হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ (বুধবার) থেকেই কর্মসূচিতে আরও বেশি জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হবে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ৯ মাস পরও নির্বাচন বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ না থাকা নিয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠকে তাঁরা বলেন, সরকারে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনকে ঘিরে নেতিবাচক রাজনীতি করছে। এর ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

চাপের কৌশলেই এগোবে বিএনপি

স্থায়ী কমিটির নেতারা পরিষ্কারভাবে জানান, এখনই বড় ধরনের কর্মসূচি নয়, বরং ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো হবে বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে। আন্দোলনের গতি বাড়লেও সেটা হবে সংঘাত এড়িয়ে, নিয়ন্ত্রিতভাবে—যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে জনমত গঠন করা যায়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা সরকারকে সময় ও সুযোগ দিচ্ছি। কিন্তু এই ধৈর্য অনন্তকাল থাকবে না।”

 অস্থির রাজনৈতিক বাস্তবতা: মাঠে নানা পক্ষ, সন্দেহ বাড়াচ্ছে বিএনপির

বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে—বর্তমানে বিভিন্ন পক্ষ হঠাৎ করে বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজপথে নামছে, যার পেছনে একটি ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি গোষ্ঠীগত বিভাজনও চোখে পড়ছে। কেউ কেউ মনে করেন, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, গণভোট, সংবিধান বাতিল, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ একাধিক ইস্যুতে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মকাণ্ড নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, এসব আন্দোলন সরকার নিয়ন্ত্রিত অথবা সরকারের নির্দিষ্ট মহলের ইন্ধনে পরিচালিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য বিরাজনীতিকরণ বা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরি।

ফখরুলের হুঁশিয়ারি: পরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা চলছে

এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চলছে।"

বিএনপি মনে করে, সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় যাতে নিজেদের অনুগত কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। যদি এই ষড়যন্ত্র সফল হয়, তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বড় হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

 আওয়ামী লীগ থেকে আসছে বিএনপিতে? নেপথ্যে বিতর্ক

বৈঠকের শুরুতে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের নির্যাতনে জড়িত না থাকা নেতাদের বিএনপিতে যোগদানের গুঞ্জন। তবে অধিকাংশ নেতাই এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। অনেকে মনে করেন, এটি রাজনৈতিকভাবে লাভজনক নাও হতে পারে।

অপেক্ষার রাজনীতি না, ধাপে ধাপে চাপ প্রয়োগের কৌশলই বিএনপির টার্গেট

তারা লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালভাবে যুক্ত থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগোচ্ছে এক নতুন কৌশলের পথে—ধীরে ধীরে চাপ, নিখুঁত রাজনৈতিক চাতুর্য, এবং সময়ের ব্যবহার করে সরকারকে সিদ্ধান্তের মুখোমুখি দাঁড় করানো।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এই কৌশলের ফলাফল স্পষ্ট হবে—সরকার মাথানত করবে, না কি রাজনৈতিক সংঘাত নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি