close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশের সীমান্তে চোরাচালানের প্রভাব দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে মূল্যবান স্বর্ণ, রূপা, পোশাক এবং খাদ্যপণ্য, অপরদিকে, ভারত থেকে অস্ত্র, মাদক, নকল পণ্য এবং বিভিন্ন অবৈধ সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। এই চোরাচালান শুধু অর্থ পাচারের কারণ নয়, বরং সীমান্ত এলাকায় অপরাধের বৃদ্ধিরও প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ৫ কেজি ৪৭৮ গ্রাম ওজনের ৪৬টি স্বর্ণের বারসহ দুজন পাচারকারীকে আটক করেছে। এই স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। একই সময় বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ১৭২ কোটি ২ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান সামগ্রী জব্দ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, রুপা, তৈরি পোশাক, মাদকদ্রব্যসহ আরও বহু সামগ্রী।
এছাড়া, বিজিবি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করেছে। ৬টি পিস্তল, ৮টি গান, ১টি রাইফেল, ১টি রিভলবার, ৪টি ককটেল এবং ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মিয়ানমার এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত এসব অবৈধ পণ্য শুধু সামাজিক অপরাধ বাড়াচ্ছে, তা নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক।
বিজিবি জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২3 পর্যন্ত প্রায় ৯২৫ কেজি ৯১৯ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে, যা ভারতে পাচারের জন্য বাংলাদেশ রুট ব্যবহার হচ্ছিল। চোরাচালানের এই বাণিজ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজিবি এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চোরাচালান ঘটানো হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সহায়তায়।
বাংলাদেশে চোরাচালান হয়ে আসা ভেজাল পণ্যের মধ্যে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, নকল ও নিম্নমানের কসমেটিক্স, ওষুধ, পোশাক এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের সীমান্তবর্তী ৩০টি জেলা এবং মিয়ানমারের সীমানা দিয়ে এসব পণ্য পাচার হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ২০২৩ সালে জানায়, মাত্র এক বছরে প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার স্বর্ণ এবং হীরা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার স্বর্ণ এবং ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই অবৈধ বাণিজ্যকে রোধ করা যায় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা দাবি করছেন, সীমান্তে আরও কঠোর নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
Inga kommentarer hittades