নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝালকাঠি শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান হাদির বোন মাসুদা হাদি। দিনটি ছিল ২৬ ডিসেম্বর, ঝালকাঠির বাসস্ট্যান্ড মোড়ে আয়োজিত এক বিশাল মানববন্ধনে তিনি এই ঘোষণা দেন, যা উপস্থিত জনতার নজর কাড়ে এবং তাদের মাঝে আশার সঞ্চার করে। সেই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা শুধু মাসুদা হাদির প্রার্থিতার বিষয়ে সমর্থন জানাতেই আসেনি, তারাও এদিন শহীদ ওসমান হাদির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হাজির হয়েছিল।
এদিন সকালে মাসুদা হাদিকে প্রার্থী করার দাবিতে তার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা ঝালকাঠিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় সেখানে, আর মাসুদা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "ব্যক্তিগতভাবে এই মুহূর্তে আমার বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই। তবে ইনকিলাব মঞ্চ এবং পরিবারের পক্ষ থেকে যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে শহীদ ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ এবং দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রস্তুত আছি।"
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর অস্ত্রধারীদের হামলা হয়। লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় তাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে উঠে এবং তারা সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্যপ্রমাণের আলোকে এই হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। চিহ্নিত হামলাকারীরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তার সহযোগী আলমগীর শেখ।
গুলিতে ওসমান হাদির মস্তিস্কের স্টেম সেল (Brain stem cell) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান হয়। এরপর ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তার বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে দেশবাসী হৃদয়ে বেদনাবোধ করে এবং তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
ঝালকাঠির সেই মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ওসমান হাদি ছিলেন এক নির্ভীক সৈনিক। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন সংসদে গিয়ে শোষিত মানুষের পক্ষে এবং ইনসাফ কায়েমের জন্য কথা বলতে। ঘাতকরা তার কণ্ঠ থামিয়ে দিলেও তার আদর্শকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে তার স্বপ্ন এবং আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে তার বোন মাসুদাকে সামনের সারিতে আসতে আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা আরও বলেন, "আমরা মাসুদা হাদির মাঝে শহীদ হাদির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তিনি মেধাবী এবং হাদির মতোই সাহসী। ঢাকা-৮ আসনের সাধারণ মানুষ চায় হাদির রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে মাসুদা হাদি সংসদে গিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলুক। আমরা তাকেই এই আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই।"
মানবন্ধন অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেছিল সমাজের নানা স্তরের মানুষের জনসমাগম; স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ তাদের উপস্থিতি দ্বারা এই দৃঢ়মত প্রকাশ করেছিলেন। তারা অবিলম্বে ওসমান হাদির খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে মাসুদা হাদির প্রার্থী হওয়ার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। সংঘটিত এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা শুধুমাত্র ওসমান হাদির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাচ্ছিলো না, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়কারীদের বিচার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হচ্ছিল।



















