close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটক সীমিত করার সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নির্মিত হচ্ছে বিলাসবহুল বহুতল ভবন। কোনো অনুমতি ছাড়াই গড়ে ওঠা এই স্থাপনাগুলো দ্বীপের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে।
নির্মাণকাজের অগ্রগতি
সেন্টমার্টিন বাজারের ডানপাশে ডেইলপাড়ায় হোটেল ব্লু মেরিনের পশ্চিম পাশে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। দুই তলার কাজ ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভবনের নির্মাণকাজ আড়ালে রাখতে এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে যে বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিন দিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দ্বীপের আকর্ষণ বাড়লেও একই সঙ্গে গড়ে উঠছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা, দালানকোঠা ও রিসোর্ট। এ বছর সরকার পর্যটকদের আসায় নানান বিধিনিষেধ আরোপ করলেও নির্মাণ কার্যক্রম থেমে নেই।
নির্মাণকাজের পেছনের কাহিনী
নির্মাণাধীন ভবনের তদারকির দায়িত্বে থাকা রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, ভবনটি নির্মাণ করছেন ঢাকার এক ব্যক্তি। ভবনের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিন মাস ধরে তিনি কাজ তদারকি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা পাননি।
নির্মাণকাজে যুক্ত রাজমিস্ত্রি নুর মোহাম্মদ জানান, দুই মাস ধরে ছয়জন শ্রমিক কাজ করছেন। ভবনটি অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল হিসেবে নির্মিত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য ও উদ্বেগ
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন দেশের ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) একটি। পরিবেশ রক্ষার জন্য এখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি দেওয়া হয় না। তবুও ২০২২ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে নির্মিত রিসোর্টের সংখ্যা ১৯২টি। নতুন করে আরও স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশের সংকটকে বাড়াচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের প্রতিক্রিয়া
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের মদতে সেন্টমার্টিনে পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিযোগিতা চলছে। ছোট ঝুপড়ি উচ্ছেদ করলেও বহুতল ভবনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত তিন বছরে সেখানে দেড় শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে।
প্রশাসনের ভূমিকা
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি নেই। নির্মাণাধীন ভবনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে।
তবে ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রী দ্বীপে নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কিছুই সম্ভব নয় বলে জানান ইউএনও। তিনি আরও জানান, বর্তমান প্রশাসন নতুন করে ভবন নির্মাণের সুযোগ বন্ধ করেছে।
উপসংহার
সেন্টমার্টিনের মতো সংবেদনশীল দ্বীপে এভাবে অনুমতিহীন স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদে যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, তা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত ভূমিকা দ্বীপটিকে রক্ষা করতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা
এই সমস্যার সমাধানে স্থানীয়দের সচেতনতা এবং সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় সেন্টমার্টিন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য হারানোর পথে অগ্রসর হবে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली