দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক বৈঠক হয়ে উঠছে জনসাধারণের নজরে গুরুত্বপূর্ণ। এমন এক পরিস্থিতিতে, কিছুদিন আগে একটি বিশেষ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের মধ্যে। এই একান্ত বৈঠকের নানা দিক নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা। অবশেষে সেই বৈঠক সম্পর্কে মুখ খুলেছেন সিইসি নিজেই।
মঙ্গলবার (১ জুলাই), রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিইসি জানান, ইউনূসের সঙ্গে তার বৈঠকটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাতের মতো, তবে এর গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে জানাই, নির্বাচন কমিশন এখন ফুল গিয়ারে কাজ করছে। সকল ধাপে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।”
তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তার অন্যতম চাওয়া হলো—একটি ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল ইলেকশন। এ লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
তবে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন সিইসি। তার ভাষায়, “নির্বাচনের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। যখন তারিখ নির্ধারণ করা হবে, তখন তা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই জাতিকে জানানো হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক এমন এক সময়ে হলো যখন দেশজুড়ে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ঝড় বইছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ এবং মতবিনিময় ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক ব্যবসার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও, জাতীয় ইস্যুতে তার মতামত সবসময় গুরুত্ব বহন করে। অন্যদিকে, সিইসি নাসির উদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি সত্যিই সিইসির কথার সঙ্গে বাস্তব প্রস্তুতি মিলে যায়, তাহলে আগামী নির্বাচন অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করবে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও সাহসী ভূমিকার ওপর।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ইভিএম প্রস্তুতি, এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক চাপকে মাথা না ঘামিয়ে শুধুমাত্র সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে।
সর্বশেষ এই একান্ত বৈঠক ও তার ফাঁস হওয়া বিস্তারিত তথ্য রাজনীতির মাঠে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে এমন বৈঠক আরও হওয়া প্রয়োজন, যাতে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফিরে আসে।