close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাকিবকে দলে নিতে চেয়েও কেন পারেনি রংপুর

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জিএসএলে সাকিবকে দলে নিতে চেয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেল রংপুর রাইডার্স। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ঝুঁকি না নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। জানালেন সবিস্তারে শানিয়ান তানিম।..

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যাঁরা কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন, সাকিব আল হাসান তাঁদের শীর্ষে থাকবেন—এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবু গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) মতো আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও সাকিবকে দলে না দেখে হতাশ অনেক ভক্ত। রংপুর রাইডার্সের মতো শক্তিশালী দল যাঁকে স্কোয়াডে রাখতে চেয়েছিল, শেষপর্যন্ত তাঁকে না নেওয়ার ব্যাখ্যা দিল আজ।

২০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় আসরের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে রংপুর রাইডার্স। গতবারের শিরোপাজয়ী দল এবারও জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ১০ থেকে ১৮ জুলাই, গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। নেতৃত্বে থাকছেন আগের মতোই অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। তবে এ দল গঠনের পেছনে সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত ছিল—সাকিবকে না রাখা।

আজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রাইডার্সের টিম ডিরেক্টর শানিয়ান তানিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সাকিবকে দলে নেওয়ার আগ্রহ তাঁদের ছিল, কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁকে নেওয়ার সাহস করেনি ম্যানেজমেন্ট। তাঁর কথায়,সাকিব আল হাসান শুধু বাংলাদেশের না, বিশ্বের যেকোনো দলের জন্য মূল্যবান সম্পদ। আমরা তাঁকে নিতে চাইনি—এমন নয়। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি এখন অনেক জটিল। এতে করে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারত।

সাকিব আল হাসান ছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য। সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি দেশে অনুপস্থিত। এমনকি গত বছর অক্টোবরেও যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন, তখনো সেটি সম্ভব হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টাও থেমে গেছে। অন্তত বাংলাদেশের মাটিতে অথবা বাংলাদেশের দলের হয়ে।

অনেকেই ধারণা করছিলেন, হয়তো উপরমহল থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল সাকিবকে না নেওয়ার বিষয়ে। তবে শানিয়ান তানিম স্পষ্ট করেছেন, “এ বিষয়ে আমাদের কেউ কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এটি পুরোপুরি আমাদের ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। আমরা জানি না সাকিবকে নেওয়ার পর সামাজিক বা রাজনৈতিক কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটা ঝুঁকিপূর্ণ।”

সাকিবও, তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। ফলে রংপুরের এই সিদ্ধান্ত একরকম পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই হয়েছে।

দলের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান আজ সাকিবকে নিয়ে বলেন আবেগঘন কিছু কথা। “আমি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেই চিনি। সব সময় চাইব তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে। সাকিব যেখানেই থাকুক, সেই দল ভাগ্যবান।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট, খেলোয়াড়দের মধ্যে এখনো সাকিবকে নিয়ে সম্মান ও ভালোবাসার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু মাঠের বাইরের বাস্তবতা কখনো কখনো বড় হয়ে দাঁড়ায়।

এখন প্রশ্ন—সাকিব আল হাসান আবার কবে ফিরবেন? শুধু মাঠে না, দেশের মাটিতেও? সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এই ঘটনার পর তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হতে পারে।
রংপুরের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি যখন এত কৌশলীভাবে তাঁকে এড়িয়ে চলেছে, তখন বোঝাই যাচ্ছে, শুধু খেলার দক্ষতা নয়—সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও এখন একজন তারকা খেলোয়াড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

একদিকে দলে প্রয়োজনীয়তা, অন্যদিকে দেশের বাস্তবতা। এই দুইয়ের দ্বন্দ্বেই বাদ পড়লেন সাকিব আল হাসান। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এখন শুধু ব্যাট–বল নয়, একে ঘিরে আছে রাজনীতি, নিরাপত্তা, এবং গণমানসের প্রতিক্রিয়াও। এই নতুন বাস্তবতাতেই এগোচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

Walang nakitang komento