বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সময়ের অন্যতম আলোচিত ও ক্ষমতাধর কর্মকর্তা, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. ইকবাল বাহারকে ঢাকার কেন্দ্রস্থল বেইলি রোডের পুলিশ অফিসার্স মেস থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম।
তবে, এখনো পর্যন্ত এই আটকের পেছনে কোন মামলার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি পুলিশ প্রশাসন। যদিও ডিবি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর অন্তত তিনটি থানায়—গুলশান, মিরপুর মডেল ও যাত্রাবাড়ী—তার বিরুদ্ধে হত্যামামলা রয়েছে, যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত।
গ্রেপ্তারের পর ইকবাল বাহারকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং এখন তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইকবাল বাহার ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। রাজশাহী, রংপুর ও যশোরসহ একাধিক অঞ্চলের ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য পদ ছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের। এছাড়া তিনি সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশাসন বিভাগ এবং টেলিকম শাখার নেতৃত্বেও ছিলেন।
এই কর্মকর্তা কখনো প্রশংসিত, কখনো সমালোচিত হয়েছেন তার প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কঠোর মনোভাবের কারণে। তবে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এই প্রথম সামনে আসলো, যা দেশের প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।
সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিস্ময় এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই গ্রেপ্তার কি শুধুই আইনি বিষয়, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো রাজনৈতিক বা ভিন্ন উদ্দেশ্য?
বিশেষজ্ঞদের মতে, “যদি সত্যিই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে এটা হবে পুলিশের জন্য এক বড় ধাক্কা। এ ধরনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা যদি অপরাধে জড়িত থাকেন, তবে সেটা দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।
ইকবাল বাহারের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে থাকবে। তদন্ত এবং আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তেই জানা যাবে, এই গ্রেপ্তার আদৌ অপরাধমূলক প্রমাণের ফল, নাকি অন্য কোনো জটিল হিসাবের অংশ।
		
				
			


















