সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লব ৭ দিনের রিমান্ডে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
৪ আগস্টের সহিংসতায় নিহত সজল হত্যা মামলায় সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আদালত ঘিরে উত্তাল বিক্ষোভে ওঠে ফাঁসির দাবি।..

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবকে সজল হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এই মামলাটি মূলত ২০২৩ সালের ৪ আগস্টের মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষি ব্যাংক এলাকায় ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। ঘটনায় নিহত হন দিনমজুর সজল। তখনকার “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” চলাকালীন দিনটিকে ঘিরেই সংঘর্ষ বাধে, যার দায়ে সাবেক এই সাংসদের নাম উঠে আসে তদন্তে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে বিপ্লবকে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সজিব দে। এ সময় আদালতের কাছে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানানো হয় এবং ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

আদালতে শুনানিতে অংশ নেন বিপ্লবের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিন মো. আমানুল্লাহ এবং অ্যাডভোকেট হাসান মৃধা। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন কোর্ট ইন্সপেক্টর, পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম ও এপিপি নুর হোসেন। প্রায় ২০ মিনিটব্যাপী শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে ফয়সাল বিপ্লবকে সরাসরি মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

রিমান্ডের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মুন্সীগঞ্জ আদালত এলাকায়। অর্ধ সহস্রাধিক মানুষ জমায়েত হন ফয়সাল বিপ্লবের ফাঁসির দাবিতে। “ছাত্র-জনতা” ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভে স্থানীয়রা জানান, তারা পূর্বেই জানতে পেরেছিলেন যে বিপ্লবকে সকাল ১০টার আগে আদালতে হাজির করা হবে। সে অনুযায়ী অনেকেই সকাল ৮টার দিকেই জড়ো হয়ে যান।

বিক্ষোভে উত্তপ্ত স্লোগানে ফয়সাল বিপ্লবকে ‘হত্যাকারী’ আখ্যা দিয়ে বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়। অনেকে তাকে ৪ আগস্টের সহিংসতার মূল পরিকল্পনাকারী বলেও অভিযুক্ত করেন।

২০২৩ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে ঘটে ভয়াবহ সংঘর্ষ। তিনজন প্রাণ হারান, যার মধ্যে দিনমজুর সজল একজন। ঘটনার পর দায়ের করা তিনটি হত্যা মামলা ও আরও দুটি হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে উঠে আসে ফয়সাল বিপ্লবের নাম।

গত ২২ জুন রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মনিপুরীপাড়ার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন (২৩ জুন) ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। এরপর গত সোমবার তাকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, ফয়সাল বিপ্লব ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। তৎকালীন নৌকার প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসকে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে সংসদ সদস্য থাকার সময়েই তার বিরুদ্ধে নানা বিতর্কের জন্ম হয়, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৪ আগস্টের সহিংসতায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, রিমান্ডে নেয়া হলে ফয়সাল বিপ্লবকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মূল ঘটনার পেছনের কুশীলব ও পরিকল্পনাকারীদের নাম জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও তার সঙ্গে আর কারা জড়িত, সেটা বের করাও মূল লক্ষ্য।

জনগণের চোখ এখন আদালতের দিকে, তারা দেখতে চায়—বিচার কীভাবে হয় এবং দায়ী ব্যক্তিদের কীভাবে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই রিমান্ড ও বিক্ষোভ নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, এটি হবে রাজনৈতিক অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের সূচনা।

Tidak ada komentar yang ditemukan