close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

রেলওয়ের দুর্নীতি: আ.লীগের দোসররা কীভাবে রেল খাতের উন্নয়নকে লুটে নিয়েছে?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিগত ১৫ বছরে রেলওয়ের প্রকল্পে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে রেলওয়েতে বৃহৎ লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারের চিত্র। মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদে..

বাংলাদেশ রেলওয়ে, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র, নানা প্রকল্পের মাধ্যমে রেলের আধুনিকায়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে, এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং পরবর্তী ব্যবস্থাপনার মধ্যে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১৫ বছরে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও, অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে এবং প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে রোলিং স্টক (লোকোমোটিভ, কোচ, ওয়াগন, এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ) সংগ্রহের ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে ব্যাপক লুটপাটের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতির পাশাপাশি রেলওয়ে প্রকল্পগুলোর সমীক্ষা ছাড়াই কেনাকাটা করা হয়েছে। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি এখন কাজে আসছে না—লোকোমোটিভের অধিকাংশ অকেজো, এবং কোচগুলোর অবস্থা প্রায় নষ্ট। ওয়াশিং প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ অচল, এবং লাগেজ ভ্যানগুলোও বেশিরভাগই পরিত্যক্ত।

তদন্তে উঠে এসেছে, এসব দুর্নীতির পিছনে আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কিছু বড় নেতা ও কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এই কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের বিদেশে পাঠানো বিলাসবহুল সফরের খবরও সামনে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিদেশে বসবাস করছেন, আর এসব দুর্নীতি এবং লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ২০২১ সালে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে কেনা ৩০টি লোকোমোটিভে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা এই লোকোমোটিভগুলোর মধ্যে ১১টি এখন মেরামতের জন্য শপে রয়েছে, এবং বাকিগুলোর কাজ শুরুর দিন-তারিখও নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে, যাত্রী পরিবহণে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া, ২০১6 সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ১৫০টি মিটারগেজ কোচে ২৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পেও মন্ত্রী এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম সামনে এসেছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০১১ সালে কেনা ৬০০ কোটি টাকার ডেমু'র কোনো অস্তিত্বই এখন আর নেই। এগুলোর বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে, অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার জন্যও কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, কিন্তু সেগুলোও কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, রোলিং স্টকগুলো চালানোর জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, তবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ায় সুষ্ঠু পরিষেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক বলছেন, রেলে কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা ছিল না। কেনাকাটায় সঠিক সমীক্ষা ছাড়া এগুলোর বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, যার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। এ সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

এই প্রকল্পগুলোর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান হলেও, প্রশ্ন উঠেছে—কীভাবে এত বড় পরিমাণ দুর্নীতি করা হলো, এবং কেন এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, "আমাদের সরকারের সময়ে রেলের উন্নয়ন হয়েছে, তবে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। আমরা সকল বিষয়ই খতিয়ে দেখছি এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।"

তবে, এ সব প্রকল্পের দুর্নীতির পরও, প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রীদের এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকার বিষয়টি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তিকর।

এ অবস্থায়, রেলওয়ে খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Geen reacties gevonden