রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতিতে হঠাৎ করে বড় ধাক্কা এসেছে। সদ্য গঠিত উপজেলা কমিটির মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিন সদস্য দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এবং কেন্দ্রীয় দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করেন।
পদত্যাগকারী তিন নেতার নাম যথাক্রমে হাদিউজ্জামান রাফি, ফুয়াদ হাসান গানিম ও রাবিউল ইসলাম রাহুল। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কমিটিতে নাম প্রকাশের আগে তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি এবং তাঁরা আগেই রাজনৈতিকভাবে নির্লিপ্ত থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৫ সালের ১৭ জুন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের যৌথ স্বাক্ষরে ২০ সদস্যবিশিষ্ট বাগমারা উপজেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে আলী মর্তুজাকে প্রধান সমন্বয়কারী এবং রফিকুল ইসলাম ও আল-আমিনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে মনোনীত করা হয়।
কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় অনুমোদনের পরবর্তী তিন মাস অথবা পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত।
তবে এই ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ১৯ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একাধিক স্ট্যাটাস এবং আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্রে দেখা যায়, তিন সদস্য নিজেদের নাম কমিটিতে দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
পদত্যাগপত্রে হাদিউজ্জামান রাফি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি, আগেই এনসিপি নেতাদের তা জানিয়েছিলাম। তবুও আমার নাম কমিটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। আমি সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগ করেছি।
আরেক পদত্যাগকারী সদস্য ফুয়াদ হাসান গানিম বলেন, “আমি বিএনপির সমর্থক পরিবারের সন্তান। এনসিপির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বারবার অনীহা জানিয়েও শেষ পর্যন্ত কমিটিতে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা আমার জন্য বিব্রতকর। তাই পদত্যাগ করেছি।
রাবিউল ইসলাম রাহুল বলেন, “আমি রাজনীতি করতে চাই না। আমি একজন ব্যবসায়ী এবং নিজের পেশাগত জীবনে মনোযোগী থাকতে চাই। দলীয় কমিটিতে আমাকে অপ্রত্যাশিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করায় নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে বাগমারা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আলী মর্তুজা বলেন, “তারা হয়তো পারিবারিক বা সামাজিক চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পদত্যাগ করলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেন্দ্রীয় কমিটি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিন সদস্যের এই হঠাৎ পদত্যাগ নিয়ে বাগমারার রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সদ্য ঘোষিত একটি কমিটি থেকে একসঙ্গে তিন সদস্যের পদত্যাগ কেবল হতাশাই নয়, বরং দলে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যথাযথ যাচাই-বাছাই না করায় তৃণমূল নেতাদের মাঝে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।
এনসিপি’র রাজনীতিতে রাজশাহীর এই পদত্যাগপত্র পর্ব একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে—দলীয় কমিটি গঠনের আগে কি তৃণমূলের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়? নাকি উচ্চপর্যায় থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে?



















