close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ভিজিডির কার্ড ভাগাভাগি, অভিযোগ জানাল এনসিপি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাজশাহীতে ভিজিডি কার্ড ভাগাভাগিতে বিএনপি-জামায়াতের জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। এনসিপির প্রতিবাদ, চেয়ারম্যানের আত্মগোপন—ভিজিডির প্রকৃত প্রাপকেরা আজ হতাশ ও বঞ্চিত।..

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নে দুস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি (VGD) কার্ড নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ও রাজনৈতিক ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় যুক্ত হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের নাম, যার ফলে এলাকায় ব্যাপক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যাদের দাবি—এই কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতি চরমে উঠেছে।

বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ ছিল ৪০০টি। অথচ সেখানে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৬৫৭ জন দরিদ্র নারী। এই বিপুল চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু তাতেও স্বচ্ছতা না রেখে কার্ড বণ্টনকে একটি রাজনৈতিক ভাগাভাগির খেলায় পরিণত করা হয়েছে বলেই অভিযোগ এনসিপির।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা নিয়েছেন ২২৫টি কার্ড, আর জামায়াতের দখলে গেছে ৯০টি। এ নিয়ে বাকি কার্ডগুলো বিতরণের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এনসিপি নেতারা।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এনসিপির রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী শামীমা সুলতানা বলেন, “বেলপুকুর ইউপির সব ভিজিডি কার্ড বিএনপি-জামায়াত ভাগাভাগি করে নিয়েছে। চেয়ারম্যানকে ভয় দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তাহলে সাধারণ দরিদ্র নারী কোথায় যাবে?” তিনি আরও বলেন, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয় বরং দরিদ্র নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য ইউএনও অফিসে গিয়েছিলেন।

শামীমা সুলতানার দাবি অনুযায়ী, অনেক ভিজিডি কার্ড টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। প্রকৃত দরিদ্র মানুষ এই কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এনসিপি এসব অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

এদিকে এই ঘটনায় বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান আতঙ্কে কার্যালয়ে যাননি। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, “প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদের যাচাই-বাছাই করে তালিকা আনার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নেতারা চাপ দিয়ে নিজেদের তালিকা দিতে থাকায় স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

চেয়ারম্যান জানান, তিনি ইউএনওকে লটারি করার প্রস্তাব দেন। তবে এরই মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ইউএনওর কাছ থেকে “সমঝোতার মাধ্যমে তালিকা তৈরির অনুমতি” নিয়ে আসেন। এতে করে চেয়ারম্যান কার্যত চাপে পড়ে যান।

চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বলেন, “আমি আবারও ইউএনওর কাছে অনুরোধ জানিয়েছি লটারি করার জন্য। এখন সেটাই হবে।”

অভিযোগ আরও জোরালো হয় যখন জানা যায়, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বাক্কার ও জামায়াত নেতা ফাইসুল ইসলাম সরাসরি কার্ড বণ্টনে জড়িত। আবু বাক্কার নিজের মুখেই স্বীকার করেন—“বিএনপির জন্য ২২৫টি কার্ড নিয়েছি, জামায়াত নিয়েছে ৯০টি। বাকিগুলো ইউপি সদস্যদের ও এনসিপিকে দিতে বলা হয়েছে।”

তবে জামায়াত নেতা ফাইসুল ইসলাম এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন বলেন, “ভিজিডি কার্ড ভাগাভাগি হোক সেটা এনসিপি চায় না, তাদের সে দাবির ভিত্তিতেই তারা এসেছে। আমি বলেছি, ইউনিয়ন পরিষদ যদি নিজেরা করতে না পারে, তাহলে লটারি হবে। ইউনিয়ন কমিটি লিখিতভাবে জানালে, আমরা উপজেলা কমিটি থেকে লটারির মাধ্যমে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেব।

এটি কোনো সাধারণ অনিয়ম নয়। ভিজিডি কার্ড গরিব নারীদের জন্য একটি বেঁচে থাকার উপায়। সেই কার্ড যদি রাজনৈতিক কোন্দল ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বণ্টিত হয়, তাহলে সমাজের দরিদ্রতম শ্রেণিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এনসিপির অভিযোগ সত্য হলে এটি শুধু রাজনৈতিক দুর্নীতি নয়, এটি মানবিক অধিকার হরণের শামিল। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator