রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশাসনিক কেন্দ্র শেরেবাংলানগরে জনসচেতনতা এবং জনশৃঙ্খলার স্বার্থে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আগামী রবিবার, ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে শুরু করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত, এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ ও শোভাযাত্রা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই নির্দেশনা শনিবার (২১ জুন) রাতে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনসমক্ষে আনা হয়। এতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিশুমেলা থেকে শুরু করে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) — এই দুই গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়সহ আশপাশের পুরো এলাকাকে সভা-সমাবেশের জন্য "নিষিদ্ধ জোন" হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন, বাজেট ঘিরে জনস্বার্থে উত্তেজনা এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত নানা অসন্তোষ— এসব কারণেই সরকার আগেভাগে এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে 'প্রিভেনটিভ অ্যাকশন' নিতে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষ করে এনবিআর ও বিডা— দুটোই সরকারের রাজস্ব এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনার প্রাণকেন্দ্র। অতীতে বেশ কয়েকবার এই এলাকা ঘিরে বিক্ষোভ, অর্থনৈতিক চাপ ও নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে এবার আর কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিএমপি ঘোষণায় বলা হয়েছে, শেরেবাংলানগর থানার অধীনে নিচের এলাকাগুলোতে কার্যকর হবে নিষেধাজ্ঞা:
শিশুমেলা এলাকা
আগারগাঁও রোড
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ভবন এলাকা
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) ভবন ও আশপাশ
নির্বাচন কমিশন ভবন সংলগ্ন পথ ও সংযোগ সড়কসমূহ
এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬’–এর ২৯ ধারা অনুসারে। এই ধারায় পুলিশের হাতে এমন পরিস্থিতিতে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার রয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত মূলত জননিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার স্বার্থে নেওয়া হয়েছে এবং এই আদেশ কেউ অমান্য করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কোনো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রতিবাদ প্রতিরোধের লক্ষ্যে নেওয়া হতে পারে। যদিও সরকারি সূত্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে এটি স্পষ্ট— প্রশাসন আগেভাগেই সবদিক থেকে সজাগ।
সরকারি কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারী ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে অনেকে ধারণা করছেন, আসন্ন বাজেট ঘোষণা ও বিনিয়োগ নীতির আলোকে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেটিও বড় কারণ।
সরকারের প্রশাসনিক জোনে এই নিষেধাজ্ঞা শুধু সাময়িক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি এক ধরনের বার্তা— “যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন”।



















