close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

প্রসবের সময় নার্সের টানাটানিতে নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকার কেরানীগঞ্জের আল বারাকা হাসপাতালে ডেলিভারির সময় নার্স ও মিডওয়াইফের চরম অদক্ষতায় জন্মের আগেই মৃত্যু হলো একটি নবজাতকের। পেটের ভেতর দেহ রেখে শুধু মাথা বের করে ফেলেন তারা। পরিবারে শোক, এলাকায় ক্ষোভ।..

প্রসবের সময় নার্সদের টানাটানিতে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন — কেরানীগঞ্জের আল বারাকা হাসপাতালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি ‘আল বারাকা’ হাসপাতালে ঘটেছে এক বেদনাদায়ক, মর্মস্পর্শী ও ভয়াবহ ঘটনা। চিকিৎসকবিহীন ডেলিভারি রুমে নার্স ও মিডওয়াইফের চরম অদক্ষতায় প্রসবকালীন সময়ে এক নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাতে, যার প্রেক্ষিতে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

 

৩৮ বছর বয়সী সাথী বেগম, যিনি তিন সন্তানের জননী, রোববার সন্ধ্যায় প্রসব ব্যথা অনুভব করলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে দ্রুত কদমতলী মডেল টাউন এলাকার ‘আল বারাকা’ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত প্রায় ৯টার দিকে হাসপাতালের নার্স আমেনা আক্তার এবং মিডওয়াইফকারী শাহিনা আক্তার ওটিতে সাথীকে নিয়ে যান। সেই সময় সেখানে কোনো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না — ওটি পরিচালনায় ছিলেন কেবল নার্স, মিডওয়াইফ এবং হাসপাতালের দুই আয়া।

প্রসূতি মায়ের অবস্থা সংকটজনক হলেও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক না থাকায় নার্স ও মিডওয়াইফ নিজেরা নবজাতককে বের করে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাদের অদক্ষ টানাটানিতে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাথাটি বের হয়ে এলেও, দেহটি থেকে যায় মায়ের পেটে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির পর, প্রায় দুই ঘণ্টা পেরিয়ে রাত ১১টার দিকে এক চিকিৎসককে ডেকে এনে অপারেশন করে নবজাতকের দেহ বের করা হয়।

 

ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত নার্স আমেনা আক্তার ও মিডওয়াইফ শাহিনা আক্তারকে আটক করে। পরদিন, সোমবার, মৃত নবজাতকের পিতা মাইনুদ্দীন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘আল বারাকা’ হাসপাতালের মালিক হচ্ছেন রোহিতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সোলায়মান জামান। ঘটনার কয়েক দিন আগেই, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমানে হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন খাইরুল ইসলাম রিপন নামের এক ব্যক্তি, যাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি সমঝোতা করার।”

 

এই ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়—বরং দেশের বহু বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের অসংগঠিত, অদক্ষ এবং মানবিকতাবর্জিত ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যেখানে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে নার্স ও মিডওয়াইফদের হাতে প্রাণ হারাতে হয় সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শিশুকে, সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অত্যন্ত জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। শুধুমাত্র মামলা দায়ের করে অথবা কয়েকজন কর্মীকে আটকে রেখে এ ধরনের ঘটনার প্রতিকার সম্ভব নয়—প্রয়োজন কঠোর তদারকি, লাইসেন্স যাচাই, জরিমানা এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।


শিশুটির আর্তনাদ নেই, কিন্তু প্রশ্ন আছে

কেরানীগঞ্জের এই দম্পতির ঘরে আর একটি সন্তান আসার কথা ছিল, নতুন আলো, নতুন স্বপ্ন। কিন্তু এক নির্দয়, নিষ্ঠুর চিকিৎসা ব্যবস্থার বলি হলো সেই শিশুটি, যার জন্মের মুহূর্তেই জীবনের ইতি টানা হলো। চিকিৎসা যদি মৃত্যু ডেকে আনে, তবে তা আর চিকিৎসা থাকে না—তা হয় খুন।

Ingen kommentarer fundet