close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

প্রচারে বাংলা-উর্দু, সাবওয়েতে ইফতার, নিউইয়র্কের অন্য রকম মুসলিম মেয়র প্রার্থী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
উগান্ডায় জন্ম, র‍্যাপ গান, মসজিদে ইফতার আর বলিউড প্রেম—সব ছাপিয়ে নিউইয়র্কের সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির কাহিনি যেন সিনেমাকেও হার মানায়!..

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত নাম—জোহরান মামদানি। কদিন আগেও যাঁর পরিচিতি সীমিত ছিল শুধুই রাজ্য আইনসভার এক প্রগতিশীল সদস্য হিসেবে, সেই মামদানিই আজ ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী। তাঁর এই নাটকীয় উত্থান যেন একটি আধুনিক রূপকথার কাহিনি। একদিকে তাঁর র‍্যাপ গাওয়া দিন, অন্যদিকে মুসলিম পরিচয়ের সাহসী প্রকাশ; সব মিলিয়ে এই তরুণ এখন হয়ে উঠেছেন লাখো নিউইয়র্কবাসীর প্রত্যাশার প্রতীক।

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা, ব্রঙ্কস হাইস্কুল থেকে শুরু করে বোডইন কলেজ পর্যন্ত। কলেজে থাকতেই ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনে।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন জোহরান। এরপর তাঁর যাত্রা শুধু রাজনীতির নয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ধারণ করে এক নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনার দিকে।

একেবারে সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে তাঁর নির্বাচনী প্রচার। কখনো উর্দু ভাষায় বলিউড ক্লিপ যুক্ত করে ভিডিও বানিয়েছেন, কখনো স্প্যানিশে মেসেজ দিয়েছেন। আবার দেখা গেছে সাবওয়ের প্ল্যাটফর্মে বসে ইফতার করছেন—সবই মুসলিম পরিচয় আর নিউইয়র্কের বাস্তবতা সামনে এনে ভোটারদের মন জয় করতে।

তাঁর স্ত্রী রামা দুওয়াজি একজন সিরীয় শিল্পী। পরিচয় হয়েছিল ডেটিং অ্যাপ 'হিঞ্জ'-এ। অন্যদিকে মা বিশ্বখ্যাত নির্মাতা মীরা নায়ার এবং বাবা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিন্তাবিদ মাহমুদ মামদানি। ছোটবেলা থেকেই জোহরান তাঁদের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘দ্য নেমসেক’ সিনেমায় মায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তেও ছিল জোহরানের পরামর্শ।

রাজনীতিতে আসার আগে জোহরান ছিলেন একজন র‍্যাপার। 'ইয়াং কার্ডামম' নাম নিয়ে বিভিন্ন গানে তুলে ধরতেন অভিবাসী জীবনের গল্প, বৈষম্য আর বর্ণবাদ। দাদিকে উৎসর্গ করে করা তাঁর গান ‘নানি’ হয় ভাইরাল। স্পটিফাই ও ইউটিউবে তাঁর গান পৌঁছে গেছে হাজারো শ্রোতার কাছে। এমনকি ডিজনির 'কুইন অব কাটউই' ছবির সাউন্ডট্র্যাকেও ছিলেন তিনি।

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো স্টেট অ্যাসেম্বলিতে জয় লাভ করেন, হারিয়ে দেন চারবারের অভিজ্ঞ এক রাজনীতিবিদকে। চার বছরে প্রায় ২০টি বিল পেশ করলেও বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র তিনটি। তবে একটি বছরের ফ্রি বাস প্রকল্প নিয়ে গর্ব করেন এখনো। সহকর্মীরা বলেন, তাঁর চিন্তাভাবনা রাজনীতিতে এক নতুন বাঁক এনেছে।

আজ ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণ, মেয়র হলে হবেন নিউইয়র্কের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। তাঁর ভাষা, ভঙ্গি ও সাহসী অবস্থান নিউইয়র্কবাসীর এক বড় অংশকে আকৃষ্ট করেছে।

জোহরানের সবচেয়ে বিতর্কিত দিক তাঁর ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান। বিডিএস আন্দোলনের পক্ষে কথা বলা, নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের দাবি, এবং করছাড় বাতিলের বিল—all একে একে তাঁকে কেন্দ্র করে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তবু তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসরায়েলবিরোধিতা এক নয়।” তাঁর বক্তব্যের সাহস, অনেকের কাছে প্রশংসার, আবার অনেকের কাছে উদ্বেগের।

এক মুসলিম হিসেবেও জোহরান নিজের পরিচয়কে কখনো আড়াল করেননি। মসজিদে গিয়ে রোজা রাখা থেকে শুরু করে রোজাদারদের জন্য বাংলা-উর্দু ভিডিও বানানো—সবকিছুতেই ছিল ধর্ম ও বাস্তবতার মিশেল।

সাবওয়ে থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে ঝাঁপ—সবই তাঁর প্রচারের অংশ। ক্যাচি স্লোগান, সরল উপস্থাপন, সহজ ভাষা—এসব তাঁকে তরুণ ভোটারদের প্রিয় করে তুলেছে। তাঁর ভিডিওগুলো শুধু নিউইয়র্কেই নয়, সারাদেশেই আলোচনায় এসেছে।

জোহরানের পুরো প্রচার ছিল সাধারণ মানুষের সমস্যা ঘিরে—ভাড়াবৃদ্ধি, শিশু দেখাশোনা, ব্যয় সংকট। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—ফ্রি পাবলিক বাস, নিয়ন্ত্রিত ভাড়া, শিশুদের জন্য সেবার খরচ শূন্য, এবং ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি।

তাঁর এই ‘সহজ কথায় বড় চিন্তা’ মানুষকে ছুঁয়ে গেছে। কারণ জোহরান জানেন ছোট ফ্ল্যাটে থাকা কেমন, জানেন সাবওয়েতে দীর্ঘপথ পার হওয়ার কষ্ট—আর এটাই তাঁকে করে তুলেছে একজন বিশ্বাসযোগ্য নেতা।

সবদিক বিবেচনায়, জোহরান মামদানি কেবল একজন রাজনৈতিক প্রার্থী নন—তিনি এক প্রতীকের নাম। যিনি প্রগতিশীল, সাহসী, সংস্কৃতিসচেতন এবং একইসঙ্গে বাস্তবঘন রাজনীতির মুখ। তাঁর মতো একজন তরুণ, যিনি একাধারে র‍্যাপার, সংগঠক, চিন্তাশীল মানুষ ও প্রার্থী—সত্যিই নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ব্যতিক্রম।

ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, নিউইয়র্কজুড়ে আলোচনায় একটাই নাম—জোহরান মামদানি।

لم يتم العثور على تعليقات