close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে , দুদক চেয়ারম্যান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দুদক চেয়ারম্যান জানালেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। পুরনো মামলা পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।..

এক যুগ আগের বিতর্কিত অধ্যায় যেন আবার ফিরে এলো। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল দেশ-বিদেশ। সেই বিতর্কিত মামলার নতুন করে তদন্তে এবার প্রাথমিক দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া নতুন অনুসন্ধানে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।

তিনি বলেন, “যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও আগে মামলাটি রহস্যজনকভাবে পরিসমাপ্তি করা হয়। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে যেসব নথি ও তথ্য এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে—পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছিল এবং তা ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা হয়েছিল।”

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, তৎকালীন দুদক কমিশন গায়ের জোরে আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল। তদন্তের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে, সেই সময়ের কমিশনের ভূমিকা কতটা দায়ী ছিল। প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন চলাকালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির আশঙ্কা দেখিয়ে অর্থায়ন স্থগিত করে। এ সময় দুদক ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।

তবে, মাত্র দুই বছরের মাথায়—২০১৪ সালে—অদৃশ্য কারণে মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন দুদকের নেতৃত্বে ছিলেন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তারা ওই সময় মামলা বন্ধ করার পক্ষে মত দেন এবং আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দুদক নতুনভাবে বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। গঠিত হয় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির প্রাথমিক পর্যায়ের অনুসন্ধানেই উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ।

আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা কেউ দায়মুক্ত নই। যারা প্রকৃত অপরাধী, তারা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, আইনের বাইরে থাকতে পারবে না। নতুন তদন্তে যারাই জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

দুদক সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি শুধু পুরনো আসামিদের নয়, তখনকার দুদকের অভ্যন্তরীণ ভূমিকার দিকেও নজর দিয়েছে। মামলার রহস্যজনক পরিসমাপ্তির কারণ এবং তাতে কোনো রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী হস্তক্ষেপ ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প পদ্মা সেতুকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই জনগণের মধ্যে কৌতূহলের বিষয় ছিল। প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে সরকার জাতিকে এক ঐতিহাসিক অর্জন উপহার দেয়। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগের কালো ছায়া আজও স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে।

সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবিতে সাধারণ মানুষ এবং বিশ্লেষকরাও বারবার বলেছেন, পুরনো কেলেঙ্কারি আড়াল না করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এবার দুদক যেভাবে নতুন করে অনুসন্ধানে নেমেছে, তাতে এক আশার আলো দেখছেন সচেতন মহল।

পদ্মা সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয়—এটি বাংলাদেশের সাহস, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। সেই প্রতীকের সঙ্গে যদি দুর্নীতির ছায়া লেগে থাকে, তাহলে সেটি দূর করা জরুরি। দুর্নীতির দায়ীদের মুখোশ উন্মোচন এবং আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। একযুগ পর হলেও, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক—এই প্রত্যাশাই এখন সর্বজনীন।

Geen reacties gevonden


News Card Generator