close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

পদ্মা সেতুর ৩ বছরপূর্তি: আড়াই হাজার কোটির মাইলফলক টোল আদায়ে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র তিন বছরে পদ্মা সেতু পেরিয়েছে ১.৯৪ কোটি যান, টোল আদায়ে মাইলফলক ছুঁয়েছে ২৫০৪ কোটি টাকা। খুলেছে রেল ও ব্যবসার নতুন দুয়ার।..

বাংলাদেশের অন্যতম গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু আজ পূর্ণ করল তার তিন বছরের যাত্রা। ২০২২ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনের পর এক মুহূর্তের জন্যও সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। এই তিন বছরে সেতু পার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যানবাহন, আর এতে আদায় হয়েছে রেকর্ড ২৫০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকারও বেশি টোল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার সরাসরি সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপনকারী এই অবকাঠামো কেবল একটি সেতুই নয়—এটি এখন আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রতীক।

পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতু বদলে দিয়েছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য। এক সময় উত্তাল পদ্মা পার হতে যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তি পোহাতে হতো, এখন সেই জায়গায় সেতুর উপর দিয়ে মিনিটেই চলাচল সম্ভব। কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন—সবখানেই এসেছে নতুন গতি। উৎপাদিত পণ্যের দ্রুত বাজারজাতকরণে কৃষক যেমন লাভবান, তেমনি বিনিয়োগেও এসেছে গতি।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে যান চলাচল শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেতুর নিচ দিয়ে চালু হয় রেল চলাচল—যা বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থার এক নতুন অধ্যায় রচনা করে। এরপর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে ঢাকা-ভাঙ্গা হয়ে সরাসরি খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাচ্ছে খুলনা ও বেনাপোলে—যা আগে কল্পনার বাইরে ছিল।

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গেছে উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, এমনকি ভবিষ্যতের গ্যাস লাইনও বসানো হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় এই সেতুর খুঁটি ব্যবহার করে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে এসেছে আমূল পরিবর্তন।

এই সেতুর মাধ্যমে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে টোল আদায়ের পরিসংখ্যান।
প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পার হয়েছে এবং টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি।
দ্বিতীয় বছরে যানবাহন সংখ্যা ৬৮ লাখ ছাড়িয়ে যায়, টোল আদায় হয় ৮৫০ কোটি টাকা।
তৃতীয় বছরে সংখ্যাটি আরও বাড়ে—৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান থেকে আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা।
সর্বমোট তিন বছরে সেতু পার হয়েছে প্রায় ২ কোটি যান এবং টোল আদায় দাঁড়িয়েছে ২৫০৪ কোটি টাকারও বেশি।

২০২৪ সালের ৫ জুন একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে—৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
সেই দিন পার হয়েছে ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন, যা একদিনে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপারের রেকর্ড। এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনের দিন ৫১ হাজার ৩১৬টি যান পার হয়েছিল।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টোল আদায় আরও সহজ ও আধুনিক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে চলন্ত গাড়ি থেকেই টোল পরিশোধের ব্যবস্থা চালু হবে। এর মাধ্যমে যানজট ছাড়াই টোল সংগ্রহ সম্ভব হবে এবং সেতু ব্যবস্থাপনায় আসবে স্বয়ংক্রিয়তা।

সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোনো বাধা ছাড়াই তিন বছর সেতু চলেছে—এটা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সক্ষমতার বড় প্রমাণ।

আর পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন বলেন, “এই সেতু দেশের মানুষকে যেমন উপকারে এনেছে, তেমনি রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়েও দারুণ অবদান রাখছে।”

সেতুর দুই পাশে ও ওপরের সড়কে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক আধুনিক ক্যামেরা। ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারছে যানবাহন, যা এক্সপ্রেসওয়ে মানের। যান চলাচল সহজ করতে সেতুর ট্রাফিক ব্যবস্থাও হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর।

পদ্মা সেতু এখন শুধু একটি সেতু নয়, এটি বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতীক। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা এই সেতু দেশবাসীর আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতার এক অনন্য নিদর্শন। আগামী দিনগুলোতে পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে যে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে, তা বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে রচিত হবে নতুন স্বর্ণযুগের সূচনা হিসেবে।

Nema komentara


News Card Generator