পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত মারাত্মক সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা জেলার রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের জগির মোড় ও চর আলহাজ মোড় এলাকায় এই সংঘাতের পর প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আরও গুরুতর মোড় নেয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক প্রতিপক্ষের লোকজনকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুঁড়ছেন। তদন্তে ওই যুবকের নাম জানা গেছে—তুষার মণ্ডল। তিনি ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সহচর। সূত্র অনুযায়ী, তুষার মণ্ডল পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের অন্যতম সহযোগী।
সংঘর্ষের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম শরীফ সরাসরি জামায়াতকর্মী তুষার মণ্ডলকে দায়ী করে বলেন, “জামায়াতকর্মী তুষার মণ্ডল প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করেছে। তিনি জামায়াত নেতা আবু তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী।”
অন্যদিকে, সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুর রহমান হামদু মেম্বার অভিযোগ করেন যে এই সংঘর্ষ পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল। তিনি দাবি করেন, “গণসংযোগে কেউ কখনও গাড়িভর্তি করে অস্ত্র নিয়ে আসে না। পুরোনো বিরোধের জেরেই মক্কেল মৃধা ও তার ছেলের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং তালেব মণ্ডল নিজেই তার কর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন।”
এ প্রসঙ্গে পাবনা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের বক্তব্য আরও গুরুতর। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে গিয়ে হামলা করেছে এবং ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সশস্ত্র জামায়াত কর্মীরা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি করে এর দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।
তবে এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া ওই যুবক তাদের দলের কোনো কর্মী নন। এই অস্বীকার সত্ত্বেও, যুবকের সঙ্গে জামায়াত নেতার পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় ঘটনাটির রাজনৈতিক তাৎপর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুলিশ প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার নিশ্চিত করেছেন যে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রকাশ্যে এমন সশস্ত্র সংঘাত স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।



















