‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ না হলে জাতির জন্য মহাদুর্যোগ দেখা দেবে’..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যদি নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনে ব্যর্থ হয়, তাহলে গোটা জাতিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে—যশোরে জোরালো হুঁশিয়ারি দিলেন জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার।..

বাংলাদেশের সামনে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তাঁর ভাষায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে না হয়, তাহলে জাতির সামনে অপেক্ষা করছে এক ভয়াল মহাদুর্যোগ।

শনিবার (২১ জুন) সকাল ১১টায় যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে রুকন শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তার এই বক্তব্য শুধু দলীয় বার্তা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এক কঠিন সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।নির্বাচনের সময় বা পদ্ধতি নিয়ে আমাদের বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো দেশবাসীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। কোনোভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া যাবে না। কারণ, একবার যদি জনগণের আস্থা হারায়, তাহলে তার ফল হবে ভয়াবহ।

তিনি আরও যোগ করেন—ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেটা প্রমাণ করতে হবে সরকারকেই। না হলে, নির্বাচনের মাধ্যমে নয় বরং দুর্যোগের মুখোমুখি হবে জাতি।

জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল দাবি করেন, নির্বাচন নয়—প্রথমে প্রয়োজন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোর কাঠামোগত সংস্কার।আইন, বিচার, সংবিধান সবকিছুই বিগত সরকারের আমলে তছনছ হয়েছে। এইসব সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না। নির্বাচিত সরকার তার কাজ করবে, কিন্তু সিস্টেম সংস্কার এখনই জরুরি।

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, স্থানীয় সরকারের কাঠামো না থাকায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ কিছু সরকারি কর্মকর্তার হাতে। এর ফলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর ব্যক্তিপূজা বেড়ে গেছে। উন্নয়নের টাকাগুলো লোপাট হচ্ছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন,যেকোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে কালো টাকা ও পেশীশক্তি দিয়ে তারা নিজেদের অনুগত লোকজন বসাবে। এতে ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দিতে জনগণ বাধ্য হবে। অথচ এই ভুল রাজনীতিই জাতিকে আজ বিভক্ত করেছে।

পরওয়ার বলেন,আমাদের পরে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অথচ আমরা একতাবদ্ধ হতে না পারায় আজও পিছিয়ে। এই অনৈক্যই আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রধান বাধা।

আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন—জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে আমাদের যেতে হবে। যদি কেউ আবার ভোট ডাকাতি, কালো টাকা কিংবা পেশীশক্তির মাধ্যমে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়—তাহলে এই জনগণই তাদের প্রতিহত করবে।

যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিবিরে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আজীজুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ। তাঁরা সবাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর জোর দেন।

গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য শুধু একটি দলের মতামত নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং জনআস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এক গম্ভীর বার্তা। যদি সরকার সত্যিই নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে যে গণবিস্ফোরণ আসতে পারে, তার ইঙ্গিতই এই বক্তব্যে মিলছে।

Aucun commentaire trouvé