close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

অবশেষে মুক্তি পেলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খলিল!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ তিন মাস কারাবন্দি ছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বলেছে, তাঁকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখা হয়েছিল। এই রায় শুধু একটি মু..

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক পরিবেশে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের জন্ম দিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র মাহমুদ খলিল। প্রায় তিন মাসের বন্দিজীবনের অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের অভিবাসন আটক কেন্দ্র থেকে তিনি মুক্তি পান। এই মুক্তির আদেশ দিয়েছেন নিউ জার্সির এক সাহসী বিচারক—যার রায় এখন মার্কিন রাজনীতি, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

মাহমুদ খলিলকে ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লবিতে থেকে গ্রেপ্তার করেছিলেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তার ‘অপরাধ’—গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ। আর এই ঘটনার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের একটি কুখ্যাত নীতি—যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশকে “ইহুদিবিদ্বেষ” বলে দমন করার হুমকি দেওয়া হয়।

খলিলের মুক্তির দিন তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ন্যায়বিচার জিতেছে, কিন্তু অনেক দেরিতে। এটা হতে তিন মাস লাগা উচিত ছিল না।" তাঁর কণ্ঠে ছিল ক্লান্তি, কিন্তু চোখে ছিল দৃঢ়তা।

বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ তাঁর রায়ে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি যে খলিল জনসাধারণের জন্য হুমকি ছিলেন বা পালানোর ঝুঁকি ছিল। তিনি সরাসরিভাবে বলেন, “এই মামলায় অভিবাসন আইনকে রাজনৈতিক শাস্তির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী।

এই পর্যবেক্ষণ শুধু খলিল নয়, বরং তাঁর মতো আরও অনেক গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীর জন্য একটি ন্যায়বিচারের বার্তা বহন করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মোহসেন মাহদাভি ও রুমাইসা ওজতুর্কসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই আদালতের আদেশে মুক্তি পেয়েছেন।

খলিলের এই তিন মাসের বন্দিদশায় তাঁর জীবন বদলে গেছে আরও একটি কারণে—এই সময়েই জন্ম নিয়েছে তাঁর সন্তান। স্ত্রী ডা. নূর আবদাল্লাহ বলেছেন, "আজকের রায় আমাদের পরিবারের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায়ের সামান্য প্রতিফলন। কিন্তু আজ আমরা একসাথে হচ্ছি—এটাই সবচেয়ে বড় বিজয়।

খলিলের মুক্তি নিয়ে হোয়াইট হাউস তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন বলেন, "নিউ জার্সির একজন স্থানীয় বিচারকের লুইজিয়ানার আটক কেন্দ্র থেকে কাউকে মুক্তি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। আমরা আপিলে সঠিক বিচার পাব বলে আশাবাদী।"

তবে আইনজীবীরা বলছেন, খলিলের গ্রেপ্তার ও আটকের পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সাধারণত অভিবাসন ফর্মে তথ্য গোপনের মতো অভিযোগে কাউকে আটক করা হয় না, অথচ খলিলকে তিন মাস ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে।

মুক্তির পর নিজের পরিচিত কেফিয়েহ পরে, মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে খলিল বলেন, “এই আটক কেন্দ্রে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁদের এখানে থাকার কথা নয়। কেউ অবৈধ নয়—কোনো মানুষ অবৈধ নয়।” তিনি বলেন, “যে দেশ মানবাধিকারের কথা বলে, সেই দেশের ভেতরে আছে এক অন্ধকার বাস্তবতা।

যদিও খলিল আপাতত মুক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে অভিবাসন সংক্রান্ত মামলাটি এখনো চলছে। বিচারক ফারবিয়ার্জ তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আদেশ স্থগিত রেখেছেন, কারণ খলিল এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছেন। আরেক অভিবাসন বিচারক খলিলের আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন—বলে দিয়েছেন, তাঁকে ‘ভিসা জালিয়াতি’ মামলায় বহিষ্কার করা যেতে পারে।

মাহমুদ খলিল এখন আর কেবল একজন শিক্ষার্থী নন—তিনি হয়ে উঠেছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক, ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতির অপরাধবোধহীন অভিব্যক্তির সাহসী মুখ। তাঁর এই আইনি লড়াই ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে।

לא נמצאו הערות


News Card Generator