চার বছর—শুধু সময়ের হিসাব নয়, আবেগ, বিস্ময় আর অপেক্ষার প্রতিচ্ছবিও। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাল বার্সেলোনা। দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে ক্লাবটির সঙ্গে লিওনেল মেসির সম্পর্কের শেষ চিহ্নটিও মুছে দিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
লিওনেল মেসি—বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন ৩৫টি শিরোপা, করেছেন অসংখ্য রেকর্ড। কিন্তু ২০২১ সালে আর্জেন্টাইন মহাতারকা যখন চোখের জলে বিদায় নেন বার্সেলোনা থেকে, তখনো বাকি ছিল তাঁর পরিশ্রমের মূল্য। ক্লাবের অর্থনৈতিক সংকট, কভিড-১৯ এর ধাক্কা আর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় স্থগিত রাখা হয়েছিল তাঁর বেতনের এক বিশাল অংশ।
তবে এবার সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। স্প্যানিশ ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম স্পোর্টস জানিয়েছে, চলতি মাসেই মেসিকে শেষ কিস্তির অর্থ পরিশোধ করেছে বার্সেলোনা। এই কিস্তির পরিমাণ ৫.৯৬ মিলিয়ন ইউরো। পুরো বকেয়া মিলিয়ে বার্সা তাকে পরিশোধ করেছে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই অর্থ সেই সময়ের, যখন বার্সেলোনা করোনার প্রভাবে বিপুল আর্থিক সংকটে পড়ে। ২০২০ সালে ক্লাবটি খেলোয়াড় ও কোচদের সঙ্গে আলোচনায় বসে, এবং সম্মত হয় যে সাময়িকভাবে বেতন স্থগিত রাখা হবে। খেলোয়াড়রা ক্লাবের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়ে রাজি হয়েছিলেন—এরমধ্যে ছিলেন মেসি, বুসকেটস, উমতিতি, কৌতিনহো, দেম্বেলে এবং কোচ রোনাল্ড কুমানও।
বছরের পর বছর কেটে যায়। অন্য ক্লাবে চলে যান অনেকেই। মেসিও প্যারিস হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে খেলছেন। কিন্তু পুরনো সেই ক্লাব, বার্সেলোনা, যেন কোনো এক দায়বদ্ধতায় আটকে ছিল। শেষমেশ, দীর্ঘ ৫ বছর পর, ক্লাবটি ধাপে ধাপে পরিশোধ করেছে সবাইকে—শেষ নামটি ছিল মেসির।
মেসির পাওনা পরিশোধের এই ঘটনাকে কেবল একটি আর্থিক লেনদেন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটা এক ধরনের দায়মুক্তি, ক্লাবটির জন্য সম্মানের বিষয়। ক্লাবের সাবেক সুপারস্টারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে, ক্লাব অবশেষে প্রমাণ করল যে তারা নিজের ইতিহাসকে সম্মান করতে জানে।
বার্সার এই পদক্ষেপ অনেক সমর্থকের চোখে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস হিসেবে। কারণ, মেসির মতো একজন কিংবদন্তির প্রতি ক্লাবের এমন দেরিতে হলেও দায়িত্বশীল আচরণ ফুটবল দুনিয়ায় একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
তবে এই ঘটনার পর এক প্রশ্ন রয়ে গেছে—মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার সম্পর্ক কি এখানেই শেষ, নাকি ভবিষ্যতে কোনোভাবে আবার দেখা হবে দু’পক্ষের? সমর্থকেরা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, একদিন বার্সার জার্সিতে আবার হয়তো দেখা যাবে ফুটবলের রাজপুত্রকে।
এখন শুধু ইতিহাস জানে, সেই অধ্যায়ের নাম কী হবে।