মার্কিন প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রধান মুখ, মেটা (Meta) প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গকে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এই নাটকীয় ঘটনাটি ঘটে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বৈঠকের সময়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা।
ঘটনার সূত্রপাত সেই বৈঠকে, যেখানে আলোচনা চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প নিয়ে। গোপনীয় ও নিরাপত্তা-সংবেদনশীল এ আলোচনায় হঠাৎ করে জাকারবার্গের উপস্থিতি রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে।
হিন্দুস্তান টাইমস ও এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাকারবার্গের কাছে সেই সময় ওভাল অফিসে প্রবেশের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছিল না। ফলে সেখানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং তাকে অবিলম্বে ওভাল অফিস থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন।
একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, “পুরো বিষয়টি ছিল যেন ‘বিজেয়ার ওয়ার্ল্ড’-এর মতো— সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত।
তবে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল। তাদের দাবি, ওভাল অফিসে জাকারবার্গের প্রবেশ ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে। ট্রাম্প শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ করাতে চেয়েছিলেন এবং জাকারবার্গ নিজে থেকেই সেখানে এসে সবাইকে ‘হ্যালো’ বলে পরে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যান।
এই সূত্র মতে, জাকারবার্গ ও ট্রাম্পের একটি পৃথক নির্ধারিত বৈঠক ছিল, যা সামরিক বৈঠকের পর হওয়ার কথা ছিল। ফলে মিডিয়ার অনেকেই ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছে বলে দাবি করেন হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
মার্ক জাকারবার্গের রাজনৈতিক পরিচয় বরাবরই ছিল বিভক্ত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনপন্থী ও ডেমোক্র্যাটিক দলঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রিপাবলিকানদের প্রতি একরকম সমর্থন দেখাতে শুরু করেন, বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘মেগা’ (Make America Great Again) কর্মসূচির প্রতি।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন জাকারবার্গ, যেখানে আরও ছিলেন প্রযুক্তি দানব জেফ বেজোস ও টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক। যদিও ইদানীং মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের গোপনীয় বৈঠকে অনুমোদনহীন কারো প্রবেশ একদিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি, অন্যদিকে প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকেও ইঙ্গিত করে। যদি জাকারবার্গকে ট্রাম্প নিজে আহ্বান করে থাকেন, তাহলে এটি প্রশাসনিক প্রোটোকলের ব্যত্যয়। আর যদি না হয়ে থাকে, তবে এটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যর্থতা।
ওভাল অফিসে জাকারবার্গের প্রবেশ ও পরে বের করে দেওয়ার এই ঘটনাটি প্রযুক্তি ও রাজনীতির অদ্ভুত এক মিশ্র চিত্র তুলে ধরে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কৌশল, জাকারবার্গের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন, ও হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তাব্যবস্থা—সব কিছু নিয়েই তৈরি হয়েছে এক রহস্যঘেরা পরিবেশ।
এই ঘটনা সামনের দিনগুলোতে কী নতুন মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।



















