যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক, যেখানে মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ।
বুধবার, ১৮ জুন—ওয়াশিংটনের মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
পরদিন, বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই বৈঠকের বিষয়বস্তু প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উঠে আসে চারটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু:
-
রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চাপ তৈরি করা এই সংকট সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে অবগত বলে জানান ল্যান্ডাউ।
-
শুল্ক বিষয়ক আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন শুল্ক চুক্তির দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।
-
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি: অঞ্চলভিত্তিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
-
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও অগ্রগতিকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ যে নেতৃত্বে এখন পরিচালিত হচ্ছে, তা গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের জন্য আদর্শ"।
তিনি আরও আশ্বাস দেন, বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সবসময় অবিচল থাকবে এবং এই পারস্পরিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে।
এই সফরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চের সঙ্গে ড. খলিলুর রহমানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
বৈঠকে উঠে আসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন শুল্ক চুক্তির খসড়া। আলোচনায় গঠনমূলক অগ্রগতি হয়েছে বলেই জানান উভয়পক্ষ।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠককে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক মহলে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ যে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ—এই বার্তাও আবারও স্পষ্ট হলো এই বৈঠকের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক রূপান্তর—সব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় আগ্রহ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করবে।ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বাস্তবিক অগ্রগতি ও পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভরপুর ছিল।