close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নৌকায় একাই আটলান্টিক পাড়ি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র ২১ বছর বয়সে একাই আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে গড়েছেন তিনটি গিনেস রেকর্ড। ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আর নিঃসঙ্গতা পেরিয়ে জারার এই যাত্রা এখন বিশ্ববাসীর বিস্ময়।..

মাত্র ২১ বছর বয়সে এককভাবে নৌকায় চড়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন যুক্তরাজ্যের তরুণী জারা লকলান। ২৪ ফুট লম্বা ছোট একটি নৌকা চালিয়ে পর্তুগালের লাগোস শহর থেকে তিনি পৌছে গেছেন দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানায়। দীর্ঘ ৪ হাজার ৩৬৬ মাইল জলপথ অতিক্রম করতে তার সময় লেগেছে ৯৭ দিন ১০ ঘণ্টা ২০ মিনিট।

এই সাহসিক অভিযাত্রায় জারা লকলান হয়ে উঠেছেন তিনটি রেকর্ডের গর্বিত অধিকারী। তিনি প্রথম নারী, যিনি এই রুটে একা বৈঠা চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। সেই সঙ্গে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি, যিনি ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় একা সাগর পাড়ি দিয়েছেন। পাশাপাশি, বিশ্বে কোনো মহাসাগর একা পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী নারী হিসেবেও গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছেন।

জারার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়াতে তিনি যুক্ত হন একটি সামরিক কলেজে। এরপর ভর্তি হন লাফবারো ইউনিভার্সিটিতে, যেখানে পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি শুরু হয় তার নৌকা চালনার (রোয়িং) অভ্যাস।

২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর শুরু হয় তার জীবন বদলে দেওয়া সেই যাত্রা। মাত্র তিন মাসের প্রস্তুতির সময় পেয়েছিলেন তিনি। এই অল্প সময়েই শিখেছেন রোয়িং, জোগাড় করেছেন পৃষ্ঠপোষক, আর ৮০০ কেজি খাদ্য ও যন্ত্রপাতিসহ নৌকাটি প্রস্তুত করেছেন।

প্রথম ৪০ দিনেই শুরু হয় প্রকৃতির কঠিন পরীক্ষা। ভয়ংকর ঝড়, প্রতিকূল বাতাস আর ধীরগতির অগ্রগতি বারবার তার মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছে। প্রতিদিন অন্তত ১৭ ঘণ্টা বৈঠা চালাতে হয়েছে তাকে। টানা চার ঘণ্টার বেশি কখনো ঘুমাতে পারেননি।

৪০তম দিনে একবার তার নৌকা উল্টে যায়, মুঠোফোন ভেঙে যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তিনি। এরপরের ৫৭ দিন কাটে পুরোপুরি নিঃসঙ্গতায়।

এই সময়ের মধ্যে জারাকে পায়ে কামড় দেয় এক ব্যারাকুডা মাছ। একবার আবার হাঙরের অস্তিত্ব টের পান তিনি, যখন রক্তের গন্ধে হাঙর ঘিরে ফেলেছিল তার চারপাশ। কিন্তু ভয়কে জয় করে তিনি চলতে থাকেন সাহসের বৈঠায়।

সবকিছু সত্ত্বেও জারা বলেন, “আমি পুরো অভিজ্ঞতাটা দারুণ উপভোগ করেছি। ভাবিনি এতটা ভালো লাগবে।” এই দীর্ঘ, কঠিন যাত্রা তাকে শিখিয়েছে ধৈর্য, সাহস এবং নিজের মানসিক শক্তিকে।

বর্তমানে জারা নতুন কোনো দুঃসাহসিক অভিযানে নামার পরিকল্পনায় নেই। তবে ভবিষ্যতে আবারও নতুন রেকর্ড গড়তে চান তিনি।

জারার এই ঐতিহাসিক অর্জনের স্বীকৃতি দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে অভিহিত করেছে “অফিশিয়ালি অ্যামেজিং!” হিসেবে। সাহস, আত্মবিশ্বাস ও একাগ্রতায় কীভাবে সীমা অতিক্রম করা যায়, জারা আজ তারই এক প্রেরণাদায়ী উদাহরণ।

Geen reacties gevonden