বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া বিভিন্ন পরামর্শ বা 'নসিহত' সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট জানিয়েছেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে প্রতিবেশীদের কোনো অযাচিত উপদেশের প্রয়োজন নেই। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ভারতের এই অবস্থানকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেন।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, এবং সেই সময়ে ভারত কোনো নেতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করেনি। এখন যখন দেশ একটি স্বচ্ছ ভোটাধিকারের দিকে যাচ্ছে, তখন ভারতের পক্ষ থেকে নসিহত আসাটা বিস্ময়কর ও অনভিপ্রেত। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের এই ধরনের হস্তক্ষেপ সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
আলোচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং সেখান থেকে দেওয়া রাজনৈতিক উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পাশের দেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়া ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানালেও ভারত তাতে সাড়া দিচ্ছে না এবং তার বক্তব্য বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি করছে বলে তিনি জানান।
তৌহিদ হোসেন আরও যোগ করেন যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ত্যাগ ও বীরত্বকে ভারত সবসময় খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস একক কোনো শক্তির অবদান নয়। এছাড়া ভারতের 'সেভেন সিস্টারস' নিয়ে কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের দায় সরকার নেবে না এবং বাংলাদেশ কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।



















