close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নবীজির (সা.) জীবদ্দশায় যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল ইরান

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নবীজির (সা.) সময়ে পারস্য-রোম যুদ্ধে মুসলমানদের আবেগ, কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী ও ঐতিহাসিক মোড় বদলে দেওয়া সেই গল্প, যা আজও বিশ্ব ইতিহাসে আলোড়ন তোলে।..

ইরান, একসময়কার পারস্য, ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাম্রাজ্যগুলোর একটি। খ্রিস্টজন্মের পাঁচ-ছয়শ বছর আগে পারস্যবাসীরা অসিরীয় শাসকদের পরাজিত করে নিনেভ দখল করে নেয়। তারা ছিল জাতিতে আর্য, আর এই আর্যরা পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল পারস্য সাম্রাজ্য। কাইরাস, দারিয়ুস এবং জেরোক্সিসের মতো বিখ্যাত রাজাদের অধীনে গড়ে ওঠা একিমেনিড সাম্রাজ্য ইতিহাসে আজও গর্বের অংশ হিসেবে বিবেচিত।

১৯৩৫ সাল পর্যন্তও বিশ্ববাসীর কাছে বর্তমান ইরান পরিচিত ছিল ‘পারস্য’ নামে। এই প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্য ছিল আধুনিক ইরানের তুলনায় বহুগুণ বড়, এবং তাদের কর্তৃত্ব ছড়িয়ে ছিল পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। বহু শতাব্দী ধরে তারা প্রাচীন গ্রিসের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পরে রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল।

৬০৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় অবস্থান করছিলেন, তখন পারস্য সাম্রাজ্য একের পর এক যুদ্ধে রোমানদের পরাজিত করছিল। ৬১৫ সালে তারা দামেস্ক পেরিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত দখল করে নেয়। এই খবর মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখের ছিল, কারণ পারস্যরা ছিল পৌত্তলিক, ঠিক মক্কার কোরাইশদের মতো। বিপরীতে রোমানরা ছিল এক ঈশ্বরবাদী জাতি যারা নবী, আখিরাত ও আসমানী কিতাবে বিশ্বাস করত। ফলে রোমানদের হার মুসলমানদের মানসিকভাবে আঘাত করেছিল, আর মক্কার অবিশ্বাসীরা এই সুযোগে তাদের বিদ্রুপ করতে থাকে।

ঠিক এই সময়ে কোরআনের একটি আয়াত নাজিল হয়, যাতে বলা হয় রোমানরা তাদের এই পরাজয়ের প্রতিশোধ অচিরেই নেবে— কয়েক বছরের মধ্যেই তারা আবার বিজয়ী হবে। সূরা রূম-এর প্রথম পাঁচ আয়াতে বলা হয়:আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে, নিকটবর্তী এলাকায়। এবং তারা তাদের এই পরাজয়ের পর খুব শিগগিরই বিজয়ী হবে— কয়েক বছরের মধ্যে। সকল কিছুর মালিক আল্লাহ। সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবে আল্লাহর সাহায্যে। তিনিই যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। তিনিই পরাক্রমশালী, দয়ালু।

(সূরা রূম, আয়াত ১-৫)

এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল— ইসলামের পক্ষে এক ঐশী বিজয়ের বার্তা।

এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে হযরত আবু বকর (রা.) এতটাই নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, তিনি মক্কার লোকদের সামনে ঘোষণা দিয়ে বললেন— ‘তিন বছরের মধ্যেই রোমানরা জয়লাভ করবে।’ কুরাইশদের পক্ষ থেকে উবাই ইবনে খলফ তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। আবু বকর তখন বললেন, যদি ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হয়, তাহলে তিনি তাকে ১০টি উট দেবেন। তখনও জুয়া নিষিদ্ধ হয়নি।

পরে রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু বকরকে পরামর্শ দিলেন সময়সীমা বাড়াতে, কারণ আয়াতে “বিদ’আ সিনীন” বলা হয়েছে, যার অর্থ ৩ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। তাই ১০টি উটের বদলে ১০০টি উট রেখে ৯ বছরের শর্তে চুক্তি করা হলো।

হিজরতের পাঁচ বছর আগে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। আর সঠিক সাত বছরের মাথায়, যখন বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয় (৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে), তখনই রোমানরা পারসিকদের পরাজিত করে এবং পারস্যের সবচেয়ে বড় অগ্নিকুণ্ড ধ্বংস করে দেয়। এ যেন এক অলৌকিক ঐশী বার্তার বাস্তবায়ন!

এই ঘটনাটি শুধু মুসলমানদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল না, বরং ইসলামবিদ্বেষীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সময়ের মতো এত বড় ঐতিহাসিক সত্য-ঘটনার সাথে কোরআনের এমন নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়া, কেবল ঈশ্বরীয় প্রেরণাই প্রমাণ করে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে, কোরআনের প্রতিটি আয়াত শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং বাস্তব ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। পারস্যের মতো শক্তিশালী সাম্রাজ্য ও রোমের মতো ইতিহাস-নির্মাতারা ইসলামের আবির্ভাবকালেই ইসলামী ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছিল।

ইসলামের ইতিহাসে এই ঘটনা শুধুই এক যুদ্ধ বা বিজয় নয়— এটা ছিল ঈমানের জয়, সত্যের জয়, আর কোরআনের সত্যতার এক বাস্তব দলিল।

ইসলামের ইতিহাসে পারস্য-রোম যুদ্ধের এই পর্বটি শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক ঘটনা নয়— এটি ছিল আসমানি নির্দেশনার এক জীবন্ত উদাহরণ। এমন এক ঘটনা, যা কোরআনের সত্যতা ও নবীজির (সা.) নেতৃত্বে ঈমানদারদের বিজয়ের ভিত্তি শক্ত করে তোলে। ইতিহাসের পাতায় আজও এ ঘটনা জ্বলজ্বল করে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator