নারী শ্রমশক্তির অবমূল্যায়ন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুলতবি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের নারীরা নানা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বর্তমানে কর্মজীবনে তাদের অংশগ্রহণে নেমে এসেছে অবনতি। বিশেষত, করোনাকালীন ক্ষতির পরেও নারী শ্রমের ক
বাংলাদেশের নারীরা নানা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বর্তমানে কর্মজীবনে তাদের অংশগ্রহণে নেমে এসেছে অবনতি। বিশেষত, করোনাকালীন ক্ষতির পরেও নারী শ্রমের ক্ষেত্রগুলোতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। সমাজের প্রত্যাশা থাকলেও, নারীদের শ্রমশক্তি এখনও ৫০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি, যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করছে। নতুন প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে দেখা গেছে, নারীদের অংশগ্রহণ গার্মেন্টস ও ব্যাংকিং খাতে একেবারে স্থির হয়ে গেছে, এবং পুরুষদের তুলনায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। গার্মেন্টস খাতে নারীর অংশগ্রহণে মন্দাভাব গার্মেন্টস সেক্টর বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলেও, এখানে নারীর অংশগ্রহণের হার গত কয়েক বছরে মারাত্মকভাবে কমেছে। ২০১৪ সালে যেখানে গার্মেন্টস খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে তা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, অটোমেশন ও অন্যান্য শিল্পে উন্নতির ফলে, গার্মেন্টস খাতে কাজের সুযোগ কমে গেছে। মজুরি এবং সুবিধা কম হওয়ায়, তরুণদের মধ্যে এই সেক্টরে আগ্রহ কমেছে। ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) এর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গার্মেন্টস খাতে মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা একসময় ছিল ৮০ শতাংশেরও বেশি। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটি এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। কম মজুরি, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব এবং যৌন হয়রানির ঘটনা ইত্যাদি কারণে, বর্তমানে অনেক পরিবারই নারীদের গার্মেন্টস খাতে কাজ করতে উৎসাহিত করছে না। ব্যাংকিং খাতে নারীর অবস্থান: থমকে থাকা উন্নতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতেও নারীদের সংখ্যা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা তিন বছর ধরে ১৬ শতাংশে আটকে আছে। যদিও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু তা দেশের মোট জনবলের তুলনায় অনুপাতিকভাবে খুব কম। বিশেষত, ব্যাংকের উচ্চ পদে নারীদের পদোন্নতি বা সুযোগ পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন যে, মহিলাদের বড় পদে উন্নীত করা হয় না এবং তারা নানা সময় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ কাজেও নিযুক্ত হন, ফলে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনিন সুলতানা বলেন, নারীরা অনেক সময় পরিবার এবং সন্তানের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন, যা তাদের পেশাগত উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, তিনি বলেন, দক্ষ নারী কর্মীদের প্রতিষ্ঠান উন্নতি ও পদোন্নতির সুযোগ দিতে পারে, এবং সেটা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উৎসাহিত হওয়া প্রয়োজন। নারীদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা ও সহায়ক পরিবেশের অভাব বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম জানিয়েছেন, বর্তমানে নারীরা সংসারের ৮০ শতাংশ কাজ করেন, ফলে তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগদান একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য যত্ন কেন্দ্র থাকলেও, তা যথেষ্ট নয়। এছাড়া, বাল্যবিবাহের কারণে অনেক মেয়ের শিক্ষা এবং কর্মজীবন বিঘ্নিত হয়ে যায়, যার জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এর ফলে নারী-পুরুষের বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৪ সালের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান গত বছর তুলনায় ৪০ ধাপ পিছিয়েছে, এবং বর্তমানে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৯৯ তম স্থানে রয়েছে। নারীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের উন্নতির পথে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। দেশে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার প্রবণতা এবং তাদের পেশাগত অবস্থানের স্থিতাবস্থা সরকারের জন্য একটি বড় সংকেত। নারীদের পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য মজুরি সমতা, কর্মপরিবেশের উন্নতি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এমনকি, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যথাযথ সহায়তা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি, যাতে নারীরা সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator