close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তনের প্রস্তাব: নতুন যুগে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন


মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে, যা দেশের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বর্তমান প্রস্তাবিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, শুধুমাত্র যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন। এর সাথে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা ব্যক্তিদের ‘যুদ্ধ সহায়ক’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রস্তাবও রয়েছে। বিশেষত, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন সহযোগী শক্তির ভূমিকা পুনঃমূল্যায়ন করার এই উদ্যোগটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে জামুকা আইন সংশোধন এবং অধ্যাদেশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা আরো স্পষ্ট ও নির্ভুল করা যায়। গত ২০ নভেম্বর নতুন জামুকা কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়, এবং ২৪ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর জামুকা সভায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আসছে
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় যেসব ব্যক্তি সরাসরি যুদ্ধের মাঠে অংশগ্রহণ করেছেন, শুধুমাত্র তাদেরকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের 'যুদ্ধ সহায়ক' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাছাড়া, মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়সের সীমা ১২ বছর ৬ মাস থেকে ১৩ বছর করার প্রস্তাবও উঠেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়া 'বীরাঙ্গনা'দের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি এখনও একইভাবে প্রযোজ্য থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অসন্তোষ
স্বাধীনতার পর ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা এখনও তৈরি হয়নি, যা নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব কালের কণ্ঠকে বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, এত বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি।” তিনি আরো বলেন, “যাচাই-বাছাইয়ের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি না করা উচিত।”
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার পুনঃমূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, "রণাঙ্গনে যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার জন্যই এই পরিবর্তনগুলি করা হচ্ছে।"
প্রস্তাবিত খসড়ায় যুদ্ধ সহায়কদের নতুন অবস্থান
প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক শক্তি হিসেবে যেসব ব্যক্তি ভূমিকা রেখেছেন, তাদের নতুন শ্রেণিবদ্ধকরণ হতে পারে। মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্পী, চিকিৎসক, এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী অন্যান্য ব্যক্তিরাও ‘যুদ্ধ সহায়ক’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এমনকি, মুক্তিযুদ্ধকালীন বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলী, সাংবাদিক, ফুটবল খেলোয়াড় এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরাও এর আওতায় আসবেন।
বিধির মাধ্যমে নৈরাজ্য রোধের পদক্ষেপ
মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্বচ্ছতা আনতে জামুকা আইন সংশোধন করার পাশাপাশি, এটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করা হবে, যা আগে ছিল না। উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, "যদি বিধি না থাকে, তবে এ ধরনের নৈরাজ্যপূর্ণ কার্যক্রম চলতেই থাকবে।"
এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি
এছাড়া, জামুকার আইন পরিবর্তন এবং নতুন সংজ্ঞা নিয়ে আরও যাচাই-বাছাই চলছে। সংশোধিত খসড়ার পর তা উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে, এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, যেকোনো পরিবর্তন মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেই হওয়া উচিত।
এখানে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদান করার জন্য এই নতুন সংজ্ঞা ও তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Keine Kommentare gefunden