মে মাসে ১৮৪ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার: মহিলা পরিষদ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, মে মাসেই ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা, যৌতুক ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটেছে ১৮৪ জন নারী ও কন্যার সাথে। এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা ..

বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দিনকে দিন যে কতটা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, তা আবারও প্রমাণ করলো বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। ২০২৫ সালের মে মাসেই ১৮৪ জন নারী ও কন্যা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—যা নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য এক অশনিসংকেত।

মহিলা পরিষদ ২ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে 'নারী ও কন্যা নির্যাতন সংক্রান্ত মে মাসের পরিসংখ্যান' প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে দেশের ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে, যা প্রতি মাসে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে।

 

প্রতিবেদনে প্রকাশ, মে মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৫ জন—তাদের মধ্যে ৩১ জনই কন্যাশিশু। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, এই ধর্ষণের মধ্যে ৭ জন (৬ জন কন্যাসহ) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে, যার মধ্যে ৩ জন কন্যা। এছাড়াও ১৪ জন (১১ জন কন্যা) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন।

যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৫ জন—যার মধ্যে ৩ জনই কন্যাশিশু। এসব তথ্য সমাজে নারীর নিরাপত্তার অভাব এবং আইনের প্রয়োগে দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করছে।

 

মে মাসে বিভিন্ন কারণে ৪৩ জন নারী ও কন্যার মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৩ জন কন্যাসহ ৪ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন ১৪ জন (এরমধ্যে ৪ জন কন্যা)। এছাড়াও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আরও একজন।

অগ্নিদগ্ধের মতো নির্মম ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫ জন—তাদের মধ্যে একজন কন্যাশিশু। এইসব ঘটনা শুধু পরিবার নয়, গোটা সমাজব্যবস্থার ব্যর্থতাকে প্রকাশ করছে।

 

মে মাসেই যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যা এক ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধির চিত্র তুলে ধরে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ জন—এর মধ্যে ১ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক সহিংসতায় ৯ জন নারী ও কন্যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

 

মে মাসে ১২ জন (এর মধ্যে ৭ জন কন্যা) অপহরণের শিকার হয়েছেন। সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ৩ জন নারী। এছাড়া ১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ও আরও ৮ জন (১ জন কন্যাসহ) বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মহিলা পরিষদ।

 

এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একেকটি নিপীড়িত জীবন, বিধ্বস্ত পরিবার ও একেকটি সামাজিক ব্যর্থতার কাহিনি।
এতসব সহিংসতার মধ্যেও দেশের প্রশাসন ও সমাজের শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে একটি সভ্য রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

Walang nakitang komento