চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ঘটেছে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা—যেখানে স্থানীয় জনগণের রোষানলে পড়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এক সাবেক নেতা। গত শুক্রবার (১৬ মে) রাতে উপজেলার উত্তর গুজরা গ্রামের আয়েশা বিবির পাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ ফোরকান এলাকায় দেখা দিয়েই গণপিটুনির শিকার হন। এরপর তার মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকাবাসী রাস্তায় ঘোরাতে থাকে এবং শেষমেশ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
৪৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ ফোরকান পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ সময় পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে আবার এলাকায় দেখতে পান স্থানীয়রা। তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পরে কয়েকজন মিলে ফোরকানকে ধরে মারধর করেন। এরপর মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গোটা গ্রামজুড়ে ঘুরিয়ে বেড়ানো হয়।
খবর পেয়ে রাউজান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ফোরকানকে তাদের হেফাজতে নেয়। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “ফোরকানের বিরুদ্ধে পূর্বে দুটি মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ধর্মীয় সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাগুলো হয়। আমরা তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।”
এই ঘটনায় রাউজানসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফোরকানের প্রতি স্থানীয়দের ক্ষোভের কারণ খুঁজে দেখা যাচ্ছে, তিনি এলাকায় নানা অভিযোগে পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে ক্ষমতার সময় তার বিরুদ্ধে দাপট ও নিপীড়নের অভিযোগ ছিল বিস্তর। তাই সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুষে রেখেছিল। দীর্ঘদিন পর যখন তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়, তখনই সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
স্থানীয় একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “সে সরকার থাকাকালীন অনেক মানুষের ক্ষতি করেছে। কেউ কিছু বলতে পারতো না। আজ সময় বদলেছে, মানুষ প্রতিবাদ করছে।”
ঘটনার ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আরও আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়, অপরাধী হলে তার বিচার আইনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী নেতাদের এমন পরিণতিই প্রাপ্য।
সাবেক ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আত্মগোপন এবং জনরোষে পড়ার এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। দেশের নানা জায়গায় ক্ষমতা হারানোর পর আত্মগোপনে থাকা নেতাদের ফিরে এলে এমন লাঞ্ছনার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
এ ঘটনাটি ফের একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে—ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রতিশোধপরায়ণ সামাজিক মানসিকতা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে?
চট্টগ্রামের রাউজানে আত্মগোপনে থাকা যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ ফোরকান ফিরে আসতেই স্থানীয়দের হাতে গণপিটুনির শিকার হন। মাথা ন্যাড়া করে, জুতার মালা পরিয়ে এলাকাজুড়ে ঘোরানোর পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের মামলা। আদালত ইতোমধ্যে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। ঘটনা নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকাজুড়ে।