যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ফের ঝড় তুলেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত কর ও ব্যয় সংশ্লিষ্ট বিল—‘বিগ বিউটিফুল বিল’। এটি মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে পাস হয়েছে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে। টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ৫০-৫০ সমান ভোট হলে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের টাই-ব্রেকিং ভোটেই শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হয়।
এখন বিলটি পাঠানো হবে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে—যেখানে এটি আরও একটি ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হবে। অনুমোদন পেলে এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সইয়ের জন্য পাঠানো হবে, যেটিকে আইনে পরিণত হতে এখন সময়ের অপেক্ষা।
এই বিল মূলত কর ছাড় ও সরকারি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিতে ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা।
মূল দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
কর ছাড়ের উৎসব, ধনীদের জন্য সৌভাগ্যের দরজা খুলছে!
-
বর্তমানে: রাজ্য বা স্থানীয় কর ছাড় নেওয়া যায় সর্বোচ্চ $১০,০০০ পর্যন্ত।
-
নতুন নিয়ম: তা বাড়িয়ে $৪০,০০০ করা হচ্ছে, ৫ বছরের জন্য।
-
অতিরিক্ত ছাড়:
-
বকশিশ
-
অতিরিক্ত সময়ে কাজের আয় (ওভারটাইম)
-
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ির ঋণের সুদের উপর কর ছাড়
-
-
এই কর ছাড়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন উচ্চ আয়ের নাগরিকরা। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে—এই আইনের ফলে ধনীদের আয় বাড়বে গড়ে ২.২%, অন্যদিকে গরিবদের আয় ২.৫% কমবে কারণ তাদের জন্য থাকা সেবা কমে যাবে।
‘বিগ বিউটিফুল বিল’-এর খরচ সামলাতে সরকার কমাতে চায় নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা।
সম্ভাব্য প্রভাব:
-
১ কোটির বেশি মানুষ ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারে
-
মেডিকেইড-এর মতো কর্মসূচির বাজেট লক্ষ কোটি ডলার কমবে
-
খাদ্য সহায়তা পাবে কম সংখ্যক পরিবার
এই পরিকল্পনাকে অনেকেই বর্ণনা করছেন “উল্টো পথের সামাজিক নীতি” হিসেবে, যেখানে ধনীদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্য গরিবদের কাঁটা হচ্ছে মৌলিক সেবা থেকে।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অগ্রাধিকার ছিল সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ। এই বিলে সেটিও গুরুত্ব পাচ্ছে—
-
মোট বরাদ্দ: $৩৫০ বিলিয়ন
-
অভিবাসী আটক কেন্দ্রে: ১ লাখ শয্যার জন্য $৪৫ বিলিয়ন
-
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে: $৪৬ বিলিয়ন
-
আইসিই-তে নতুন নিয়োগ: ১০,০০০ ইমিগ্রেশন পুলিশ ২০২৯ সালের মধ্যে
এগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর ও জিরো টলারেন্সের পথে নিয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিনেটে বিল পাস হলেও চূড়ান্ত আইনে পরিণত হওয়ার আগে এটি হাউজে ফেরত যাবে। সেখানে ফের বিতর্ক ও সংশোধনের মুখে পড়তে পারে। যদিও ট্রাম্প এই বিলটি ৪ জুলাইয়ের মধ্যে নিজের টেবিলে দেখতে চান, তবুও নিজেই বলেছেন—“সময়সীমা পূরণ করা খুবই কঠিন হবে।”
রিপাবলিকানদের একাংশও বিলটির কিছু ধারা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন, বিশেষ করে গরিবদের জন্য সেবা হ্রাস এবং অভিবাসন খাতে বিশাল বরাদ্দ নিয়ে।