ইরানের পারমাণবিক শক্তির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে মার্কিন হামলায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে রোববার (২২ জুন) দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, “ইরানের সব পারমাণবিক স্থাপনায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে, যা স্যাটেলাইট চিত্রে স্পষ্ট। ‘ধ্বংস’ শব্দটি এখানে একেবারে সঠিক! সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ভূগর্ভের গভীরে। একেবারে লক্ষ্যভেদ!!!”
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে সোমবার (২৩ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার লক্ষ্য ছিল ফোরদো, নাতানজ, এবং ইসফাহান—ইরানের তিনটি উচ্চ সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা। “আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন হয়েছে,”—লিখেছেন ট্রাম্প।
আলজাজিরা জানায়, এখন পর্যন্ত ইরান সরকারি ভাবে পুরো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রকাশ করেনি। তবে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় তিনটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি জায়গায় বাংকার ধ্বংসকারী বোমার আঘাতে তৈরি গভীর গর্ত এবং একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বলেন, “ফোরদো যেহেতু ভূগর্ভস্থ স্থাপনা, তাই প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরণের হামলা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের সামিল।”
১৩ জুন ইরানের ওপর চালানো ইসরায়েলি হামলার জেরেই শুরু হয় এই উত্তেজনা। ইসরায়েলের হামলায় পরমাণু, সামরিক ও আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়। মারা যান ৪০০-এর বেশি ইরানি নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ।
হামলার পাল্টা জবাব দিতে ইরান শুরু করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস III’, যার আওতায় ২২ জুন পর্যন্ত মোট ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এই পাল্টা হামলাগুলোতে ইসরায়েলের কয়েকটি সেনাঘাঁটি এবং বেসামরিক এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামলার পরপরই ট্রাম্প বলেন, আমরা হামলার লক্ষ্যে সফলভাবে আঘাত হেনেছি এবং সব মার্কিন বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রকাশ্য 'ধ্বংস' ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এখন তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। অনেকেই বলছেন, এটাই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু?
বাকি বিশ্বের জন্য এটি একটি কঠিন সময়—আর ইরানের জন্য এক রক্তাক্ত বাস্তবতা।