close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

মা র্কি ন ঘাঁটিতে ই রা নে র হা ম লা র পর ব্যাহত হয় বিমান চলাচল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের দোহা হামলায় বন্ধ হয় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা। বিমানের গন্তব্য বদল, ফ্লাইট বাতিল ও যাত্রীদের দুর্ভোগে পুরো বিমান খাতে দেখা দেয় ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা।..

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাতারে মার্কিন ঘাঁটি কেঁপে ওঠার পরই মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নেমে আসে নীরবতা।
গতকাল সোমবার দোহায় অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘আল–উদেইদ’-এ ইরানের ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের জেরে মুহূর্তেই আকাশপথে ব্যাঘাত ঘটে। বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থা ফ্লাইট বাতিল করে, গন্তব্য পরিবর্তন করে এবং অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে আটকে পড়েন।

এই ঘটনার সূত্রপাত রোববার, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরান কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যদিও কেউ হতাহত হননি, তবুও ওই হামলার পর নিরাপত্তা সতর্কতায় কয়েকটি দেশ নিজেদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আকাশসীমা বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো। এয়ার ইন্ডিয়া ইউরোপ ও আমেরিকার পূর্ব উপকূলগামী সব ফ্লাইট স্থগিত করে। বিমানগুলোকে উড্ডয়ন কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হয় এবং আকাশে থাকা অবস্থায় দিক পরিবর্তন করতে হয়।

দুবাই, কুয়েত ও বাহরাইনের বিমানবন্দর স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। দোহা বিমানবন্দরেও কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে। আকাশে বিমানের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমে যায়।

দোহা বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী যাত্রী মিরেত পাদোভানি বলেন, “ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। লাউঞ্জে বসেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর শুনি—সংবাদমাধ্যমে আসার আগেই। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটলো।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আগেই ইউরোপ-এশিয়া সংযোগকারী অনেক আকাশপথ বন্ধ। ফলে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে যাতায়াত ছিল বিকল্প করিডর। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলার জেরে এই করিডরও অচল হয়ে পড়ে। এখন বিমানগুলো কাস্পিয়ান সাগর হয়ে বা মিসর-সৌদি আরব ঘুরে সংকীর্ণ বিকল্প রুটে চলাচল করছে।

বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি ছাড়াও নতুন করে দেখা দিয়েছে জিপিএস বিভ্রাটের হুমকি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এসকেএআই জানায়, পারস্য উপসাগরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০টির বেশি বিমানে ‘জিপিএস স্পুফিং’ ঘটেছে—অর্থাৎ ভুল অবস্থান দেখিয়ে বিমানকে বিপজ্জনক পথে পাঠানো হচ্ছে।

কুয়েত এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এয়ার ফ্রান্স কেএলএম, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, আইবেরিয়া, কাজাখস্তানের এয়ার আস্তানা—সবাই দোহা বা দুবাইগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে। ফিনএয়ার জানায়, ৩০ জুন পর্যন্ত তারা দোহাগামী কোনো ফ্লাইট চালাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমেরিকান এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও এয়ার কানাডাও ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে।

শেষ পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বাহরাইন ও কুয়েত পুনরায় আকাশসীমা খুলে দিয়েছে। কাতার সরকার জানায়, আকাশপথে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও জানিয়েছে, তাদের বিমানবন্দরগুলো চালু রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অস্থিরতা পুরো বিমান খাতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের ব্যস্ততম রুটগুলোর একটি এই অঞ্চল এখনো নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছে। যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে পারে।

বিমান পরিবহন এখন শুধু প্রযুক্তিনির্ভরই নয়, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও নির্ভরশীল। মধ্যপ্রাচ্যের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় যুদ্ধ বা উত্তেজনা গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করতে যথেষ্ট। এমন অস্থির সময়ে যাত্রী ও বিমান সংস্থার জন্য বাড়তি সতর্কতা, বিকল্প পরিকল্পনা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তগ্রহণের দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली