কন্যা সন্তান হওয়ায় মিষ্টির বাক্সে ইট-মাটির গুঁড়া

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে মিষ্টির বদলে ইট-মাটি পাঠিয়েছেন এক জামাই—এমন অভিযোগে তোলপাড় গ্রামজুড়ে। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবি করছেন, পুরো ঘটনাটি সাজানো। ঘটনা ঘিরে উঠেছে না..

কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়াকে কেন্দ্র করে সামাজিক চেতনার গভীরে লুকিয়ে থাকা লিঙ্গবৈষম্যের নগ্ন প্রকাশ ঘটলো কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়। সদ্য মা হওয়া এক নারীর শ্বশুরবাড়িতে যখন আনন্দ ও আশীর্বাদের প্রত্যাশা ছিল, তখনই সেখানে হাজির হয় অপমান ও অবজ্ঞার চরম নিদর্শন—মিষ্টির বাক্সে ইট ও মাটির গুঁড়া!

 

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাজাইকাটা গ্রামে। দিনটি ছিল রোববার, ১৫ জুন। স্থানীয়দের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনায় স্তম্ভিত পুরো এলাকা। অনেকেই একে শুধু পারিবারিক নিপীড়ন নয়, বরং নারীর প্রতি ঘৃণা ও কন্যাশিশু অবজ্ঞার নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

 

বড় ধনতোলা গ্রামের সাহেব আলী ওরফে সব্দুল হকের ছেলে মোকছেদুল ইসলামের সঙ্গে বছরখানেক আগে কাজাইকাটা গ্রামের আফতার আলীর মেয়ে আছমা খাতুনের বিয়ে হয়। প্রথম সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই পারিবারিক সম্পর্কে দেখা দেয় টানাপোড়েন। আছমা খাতুনের অভিযোগ, স্বামী মোকছেদুল গর্ভাবস্থায় বারবার বলতেন—“ছেলে হলে ভালো, মেয়ে হলে মুশকিল।

১১ জুন সকালে মোকছেদুল তার স্ত্রীর পরিবারের বাড়িতে যান। শাশুড়ির হাতে একটি কার্টন তুলে দেন—যা বাহ্যিকভাবে দেখে মনে হয় মিষ্টির বাক্স। কিন্তু খুলে দেখা যায়, সেখানে মিষ্টির বদলে রয়েছে কাদামাটি ও ইটের গুঁড়া। এই দৃশ্য দেখে হতবাক পরিবার এবং প্রতিবেশীরা।

আছমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে জানান, “আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছি, এটাই কি আমার দোষ? এজন্য আমাকে এইভাবে অপমানিত করা হলো?
তিনি আরও বলেন, “বিয়ের পর থেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এখন সন্তানের জন্ম হওয়ার পরেও আমাকে ছাড়লেন না।

 

অভিযোগ অস্বীকার করে জামাই মোকছেদুল ইসলাম বলেন, “আমি এক কেজি মিষ্টি আর শিশুর জন্য কিছু জামা-কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম। এই ঘটনা পুরোপুরি সাজানো। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই নাটক সাজানো হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, কার্টনের ভেতরের বিষয় তিনি জানতেন না এবং এটি তার পরিবারের কোনো সদস্যের ষড়যন্ত্র হতে পারে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাঈদ জানান, “ঘটনার বিস্তারিত জানি না, তবে গ্রামবাসীর কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।

এদিকে গ্রামের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। স্থানীয় নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, “এটি শুধু একটি পরিবারিক ঘটনা নয়—সমাজে কন্যাসন্তানের প্রতি বিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংস মানসিকতার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। এর বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কন্যাসন্তান জন্ম নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব কমলেও, কিছু পরিবার ও ব্যক্তির আচরণ এখনো সমাজে গভীর লিঙ্গবৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনাটি সেই কুসংস্কার ও মানসিকতার প্রমাণ।

মানবাধিকারকর্মী ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, “একটি সন্তান ছেলে না মেয়ে—তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা মানুষের নেই। সন্তান তো সন্তানই—তাকে মেনে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে মানবতা ও নৈতিকতা।

 

কন্যাসন্তান হওয়ায় মিষ্টির বদলে ইট ও মাটি পাঠানোর ঘটনাটি সমাজের নিরব লিঙ্গবিদ্বেষের নির্মম চিত্র। এমন ঘটনায় শুধু পারিবারিক বিচার নয়, দরকার সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার।
একটি কন্যাশিশু শুধু পরিবারের নয়—সমাজের, জাতির ভবিষ্যৎ। তাকে অবজ্ঞা নয়, অধিকার ও ভালোবাসা দেওয়া প্রত্যেকের দায়িত্ব।

कोई टिप्पणी नहीं मिली