বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে বড় রদবদলের ইঙ্গিত মিলেছে কলম্বো টেস্টের ঠিক পরপরই। ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের দুঃসহ চাপ এবং আগেই ছড়ানো গুঞ্জনের সত্যতা মিলিয়ে, আজ আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এ সিদ্ধান্ত ক্রিকেট মহলে চমক তো বটেই, নতুন নেতৃত্বের গুঞ্জনকেও এক ধাক্কায় সামনে নিয়ে এসেছে।
শনিবার (আজ) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন,আমার একটা ঘোষণা ছিল আমি বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়কত্বের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি। আমি টেস্ট ফরম্যাটে আর অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে চাই না।
শান্তর বক্তব্যে ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা অভিমান নয়, বরং দলের স্বার্থকেই প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি সোজাসাপ্টা বলেন,আমি একটা জিনিস সবাইকে ক্লিয়ারলি মেসেজটা দিতে চাই যে, এটা কোনো পারসোনাল কিছু না। এটা দলের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া এবং এটাতে দলের ভালো কিছু হবে বলে আমি মনে করি। আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিন অধিনায়ক একটু ডিফিকাল্ট হতে পারে। পুরোটা দলের ভালোর জন্য আমি এখান থেকে সরে এসেছি।
শান্তর এই পদত্যাগ হঠাৎ করে এলেও, এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে না। এর আগেই ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেখানে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়। আর তারও আগে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিলেন শান্ত, ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করার জন্য। বোঝাই যাচ্ছে, শান্ত নিজেই নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন।
এমনকি তখন বোর্ডের কাছে শান্ত অনুরোধ জানিয়েছিলেন যেন তাকে টেস্ট এবং ওয়ানডে ফরম্যাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বোর্ড তার সে ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়নি।
বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অবশ্য দাবি করেছেন, শান্তর নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তার ভাষায়,
“শান্তর ওয়ানডে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি। বরং বোর্ডের অভ্যন্তরে আলোচনার ভিত্তিতে সবার সম্মতিতেই নতুন নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শান্তও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেটি মেনে নিয়েছেন।”
টেস্ট অধিনায়কের পদত্যাগ মানেই শুধু একজন খেলোয়াড়ের দায়িত্ব থেকে সরে আসা নয়, বরং গোটা দলকেই নতুন করে গড়ার সূচনা। এখন প্রশ্ন উঠছে—কে হবেন পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক?
মেহেদি হাসান মিরাজ? সাকিব আল হাসান? লিটন দাস? নাকি একেবারে তরুণ কাউকে দিয়ে শুরু হবে নতুন অধ্যায়?
বোর্ড এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি। তবে ভেতরের খবর বলছে, নতুন একজন নেতা তৈরির জন্যই শান্তর এই পদক্ষেপকে এগিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে নেতৃত্ব বদলের এই অধ্যায় নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। শান্তর এই সরে দাঁড়ানো নিছক পরাজয়ের ফল নয়, বরং একটি গভীর পরিকল্পনার অংশ হতে পারে—যার মাধ্যমে দলটিকে গড়ে তোলা হবে ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালীভাবে।
নতুন নেতৃত্ব কার হাতে উঠবে, সেটিই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তবে শান্তর বিদায় সম্মানজনক এবং পরিণত মানসিকতার পরিচয়—এটা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।