close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

কিশোরগঞ্জের সেই ওসির বদলি ঠেকাতে বিএনপির বিক্ষোভ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইটনায় ওসি মনোয়ার হোসেনের ‘জিলাপি খাওয়ার’ অডিও ভাইরালের পর তাকে ক্লোজড করা হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। দলটির অভিযোগ—এটি ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল। হাওরপাড়ের এই থানা বদলির পেছনে ক্ষম..

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা আবারও আলোচনায়। এক অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার জেরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেনকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই ফুঁসে উঠেছে বিএনপি। ইটনা উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় নেতারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন—এই বদলি কোনো অপরাধের ফল নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ওসি মনোয়ারকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ইটনা উপজেলা সংগঠক আফজাল হুসাইন শান্তর সঙ্গে ওসি মনোয়ারের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ওসিকে শোনা যায়, তিনি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের টাকায় ‘জিলাপি খাওয়ার’ কথা বলছেন।

অডিও প্রকাশ্যে আসার পর জেলা পুলিশ তড়িঘড়ি করে ওসিকে ক্লোজড করে। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় বিএনপি। দলটির ইটনা উপজেলা সভাপতি এস এম কামাল হোসেন বলেন, “ওসি মনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। ফলে তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে সরানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বদলি হলে আমরা কিছু বলতাম না। কিন্তু এখানে স্পষ্ট ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ওসি সাহেব তো নিজের জন্য জিলাপি চাননি, বরং ফ্রেন্ডলি সম্পর্কের জায়গা থেকে ওই নেতার সঙ্গে এমন কথা বলেছেন। শতভাগ কাজ কারও ঠিক থাকে না, হয়তো দশভাগ ভুল হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তাকে অপদস্থ করে সরিয়ে দেওয়া অনৈতিক।”

বিএনপির নেতাদের মতে, স্থানীয়ভাবে 'সমন্বয়ক' নামে পরিচিত আওয়ামী লীগের একজন নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই ব্যক্তি হলেন আফজাল হুসাইন শান্ত, যিনি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সক্রিয় হলেও প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি তাদের।

প্রতিবাদ সভায় আরও অভিযোগ করা হয়, “ওসি মনোয়ার হোসেন ছিলেন দুর্নীতিবিরোধী। হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম ঠেকিয়েছেন তিনি। ফলে যারা সেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তারাই ষড়যন্ত্র করে তাকে সরিয়েছে।”

এদিকে স্থানীয় জনগণের মধ্যেও ওসি মনোয়ারের ক্লোজড হওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণ পেশাদারিত্বের পরিপন্থী। আবার অনেকেই মনে করেন, এটি একটি ‘ব্যক্তিগত কথোপকথন’ যা বাইরে আসা উচিত হয়নি।

ওসি মনোয়ারের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া না গেলেও, তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন—তিনি এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছেন এবং শিগগিরই বদলি হওয়া স্থানে যোগদান করবেন। তবে তার সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তারা বলছেন, "মনোয়ার হোসেন কঠোর, কিন্তু সৎ। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে মাথানত না করায় আজ তাকে এই পরিণতি ভোগ করতে হলো।"

অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “যেকোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখানে কোনো পক্ষপাতের প্রশ্ন আসে না।”

তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় ইটনা বিএনপি। তারা ওসি মনোয়ারকে পুনরায় থানায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে আরও কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় ইটনার রাজনৈতিক অঙ্গন একরকম চাঞ্চল্যের মধ্যে রয়েছে। হাওরপাড়ের এই জনপদে এখন ‘জিলাপি’ শব্দটি শুধু একটি মিষ্টি খাবার নয়—বরং একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক দখল এবং ক্ষমতার টানাপোড়েনের

Комментариев нет