close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

খরচ বাড়বে ৫ গুণ, ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। পণ্যের খরচ বাড়ছে পাঁচগুণ, আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশাল বাজার প্রায় হাতছাড়া! এই সংকট কাটাতে জরুরি কূটনৈতিক উদ্যোগের দাবি উঠেছে।..

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানিতে অচলাবস্থা, সেভেন সিস্টার্সের বাজার হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে এক ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ভারতের হঠাৎ করে সাতটি স্থলবন্দরে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দুই দেশের স্থলপথে রপ্তানি কার্যক্রম। এতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানিকারকরা। এখন রপ্তানির খরচ বাড়তে পারে পাঁচগুণ পর্যন্ত, আর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের 'সেভেন সিস্টার্স' অঞ্চলের বিশাল বাজার প্রায় হারানোর মুখে।

সীমান্তে থেমে গেছে পণ্যচালান

নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরদিনই, ১৮ মে, ভারতের সীমান্তে আটকে গেছে অনেক পণ্যচালান। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের চাতলাপুর, সিলেটের শেওলা ও তামাবিলসহ ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত যে পণ্য রপ্তানি হতো, তা এখন বন্ধ। এসব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা প্রতি ২০ ফুট কার্গো পিছু গড়পড়তা ১৮-২৫ হাজার টাকা পরিবহন খরচে পণ্য পাঠাতেন। এখন সেই পণ্য সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতায় পাঠাতে হবে এবং সেখান থেকে আবার সড়কপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিতে হবে। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ টাকায়।

সাশ্রয়ী বাণিজ্যপথ বন্ধে ক্ষতির আশঙ্কা

ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ বলেন, “ভারতের মূল ভূখণ্ডের কোম্পানিগুলোর চেয়ে আমরা কম খরচে পণ্য পৌঁছাতে পারতাম, যা আমাদের একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ছিল। সেটিই এখন বন্ধ করে দেওয়া হলো। এটি একটি বড় ধরনের বাণিজ্যিক ধাক্কা।”

তিনি আরও বলেন, “সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে আমাদের পণ্যের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু এখন সমুদ্রপথে সেসব অঞ্চলে পৌঁছাতে খরচ, সময় ও জটিলতা এতটাই বেড়ে যাবে যে অনেক কোম্পানির পক্ষে তা বহন করা সম্ভব হবে না।”

৫০টির বেশি কোম্পানির বিপর্যয়ের শঙ্কা

বাংলাদেশ প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ জানান, “প্রায় ৫০টির বেশি কোম্পানি প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি করত ভারতে। সমুদ্রপথে পাঠাতে গেলে এইসব কোম্পানির রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ এত খরচে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না।”

তিনি জানান, “এর আগে কখনো সমুদ্রপথ ব্যবহার করিনি। স্থলবন্দর আমাদের প্রধান পথ ছিল। এখন আমাদের কার্যত রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।”

আকিজ ফুডের অর্ডার স্থগিত

ভারতে জনপ্রিয় কোমলপানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের হেড অব মার্কেটিং মাইদুল ইসলাম বলেন, “আজকের পর থেকে ভারতের জন্য উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। বছরে চার লাখের বেশি কার্টন পণ্য রপ্তানি করতাম, কিন্তু এখন সে বাজার ঝুঁকিতে।”

তিনি আরও বলেন, “এতে শুধু আমরা না, ভারতীয় ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ তারা স্বল্পমূল্যে ভালো মানের বাংলাদেশি পণ্য পাচ্ছিলেন। এখন তা থেকেও তারা বঞ্চিত হবেন।”

সমুদ্রপথে বড় ধাক্কা: সময় বাড়বে এক সপ্তাহ

বর্তমানে সমুদ্রপথে রপ্তানি করতে হলে চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে প্রথমে কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পণ্য পাঠাতে হবে। তারপর আলাদা পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছাতে হবে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে। আগে যেই পণ্য একদিনে পৌঁছানো যেত, এখন তা লাগবে এক সপ্তাহের বেশি সময়। প্রতিটি ধাপে ট্রান্সপোর্ট বদলাতে হবে, যা খরচ এবং সময় দুই-ই বাড়াবে।

বিকল্প পথে প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়

ড্যানিশ ফুডের দেবাশীষ সিংহ বলেন, “আমরা আগে বর্ডার পার হলেই সরাসরি রাজ্যগুলোতে পৌঁছে যেতাম। এখন যদি সমুদ্রপথে যেতে হয়, তা হলে একাধিক ধাপে মাল পরিবহন করতে হবে। এতে আমাদের পক্ষে খরচের দিক দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।”

দুই দেশের কূটনৈতিক উদ্যোগের দাবি

রপ্তানিকারকরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভারতের সঙ্গে বসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। নইলে বাংলাদেশ বহু মিলিয়ন ডলারের বাজার হারাবে, কর্মসংস্থানেও প্রভাব পড়বে।

আশা করা হচ্ছে, দুই দেশের সরকার এই সংকটের গুরুত্ব বুঝে দ্রুতই সমাধানে এগিয়ে আসবে। নইলে শুধু ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ ভোক্তারাও এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

Hiçbir yorum bulunamadı


News Card Generator