close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

কাঠগড়ায় নিশ্চুপ নুরুল হুদা, চোখে-মুখে হতাশার ছাপ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ষড়যন্ত্রে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আদালতের কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে..

চোখে ছিল ভাঙনের ছাপ, মুখে নীরবতা… রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে রিমান্ডে সাবেক সিইসি

ঢাকার একটি আদালতে আজ এক অস্বাভাবিক দৃশ্যের সাক্ষী হলো আইনজীবী, সাংবাদিক ও উপস্থিত জনতা। এক সময় দেশের সর্বোচ্চ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আজ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায়। মুখে কোনো কথা নেই, চোখে-মুখে শুধুই ভাঙনের ছাপ। হতাশা যেন জমাট বেঁধেছে তার অভিব্যক্তিতে।

শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশি পাহারায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় সাবেক নির্বাচন কমিশনারকে। এরপর শেরেবাংলা নগর থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দ্বিতীয় দফায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা সরকার আদালতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যে যেসব গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে তা রীতিমতো কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো।
তিনি জানান, হুদার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে প্রয়োজনীয় সময় দরকার। তিনি যেসব নথি সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন, তা উদ্ধারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের জাল উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার ভূমিকা এখন গভীরভাবে তদন্তের মুখে।

তদন্ত কর্মকর্তার ভাষায়, “এই নির্বাচন ছিল একটি সংঘবদ্ধ অফিসিয়াল ষড়যন্ত্রের ফল। হুদা সাহেব বিভিন্ন সরকারি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনটিকে সাজানো রূপ দিয়েছেন।

এছাড়া তিনি আর্থিক বাজেট ও নির্বাচন বাস্তবায়নের অর্থনৈতিক দিক নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়। তার দেয়া তথ্যে আরও যেসব পলাতক ব্যক্তি যুক্ত রয়েছেন, তাদের অবস্থানও শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্যই নতুন রিমান্ড প্রয়োজন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

রিমান্ড শুনানি শুরু হয় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এই মামলা কোনো সাধারণ মামলা নয়। এটি একটি জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কীভাবে দায়িত্ব নিয়ে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে— সেই প্রমাণ আজ আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, “নুরুল হুদা ও তার মতো সাবেক তিন সিইসির যুগে ফ্যাসিস্ট শক্তির জন্ম হয়। যার ফলাফল দেশজুড়ে গুম, খুন ও নির্যাতন। আরেকটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই ফ্যাসিস্ট শক্তির বিদায় হয়েছে, কিন্তু হুদা সাহেবদের বিচারের আওতায় আনাই এখন সময়ের দাবি।”

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, “রাষ্ট্রের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে যে অভিযোগ এসেছে, তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এজন্য তদন্তকারী সংস্থাকে পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে।”

রিমান্ড আদেশ ঘোষণার সময়ও কে এম নূরুল হুদা নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি কোনো কথা বলেননি, চোখে-মুখে কোনো রাগ বা উষ্মাও দেখা যায়নি। বরং তার অভিব্যক্তি ছিল হেরে যাওয়া একজন প্রাক্তন ক্ষমতাধর মানুষের, যার ভাবমূর্তি আজ প্রশ্নের মুখে।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন ধরনের অভিযোগ এদেশে এই প্রথমবারের মতো একটি সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত হলো। কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে এই রিমান্ড শুধু একটি মামলার অংশ নয়— এটি হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator