close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কাশ্মীর সীমান্তের কাছে নিহত এক ভারতীয় সেনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে ২৮ বছর বয়সী ভারতীয় সেনার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য—প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলা হলেও, পেছনের কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে গভীর তদন্ত। মানসিক চাপ, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো রহস্য?..

কাশ্মীর সীমান্তে রহস্যজনক মৃত্যু: নিজের রাইফেলের গুলিতে প্রাণ হারালেন ভারতীয় সেনা

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তপ্ত সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘটলো আরও একটি সেনা মৃত্যুর ঘটনা, যা এখনো রহস্য ঘেরা। শনিবার বিকেলের দিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষা একটি সেনা চৌকিতে প্রহরার দায়িত্ব পালনকালে এক ভারতীয় সেনাসদস্য নিজের সার্ভিস রাইফেলের গুলিতে প্রাণ হারান। ২৮ বছর বয়সী ওই সেনার বাড়ি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তেলেঙ্গানা রাজ্যে।

এনডিটিভি এবং পিটিআই সূত্রে জানা যায়, নিহত সেনা সদস্য সাম্বা জেলার বর্ডার আউটপোস্ট ‘সরোজ’-এ দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎই সেখানে গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে আসেন সহকর্মীরা। ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে, তার রাইফেল থেকেই ছুটে আসা গুলিতে তিনি নিহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আত্মহত্যা, নাকি কিছু বেশি? তদন্তে সন্দেহের ছায়া

প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে ঠিক কী কারণে ওই সেনা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সেনা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত বক্তব্য দেয়নি, তবে পুলিশ এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স একযোগে তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ঘটনাস্থলের ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা চলছে।

সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের। সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে টানা প্রহরার দায়িত্ব অনেক সময় মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে সেনাদের। আমরা প্রতিটি সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি।”

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

এই ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীতে আত্মহত্যা ও মানসিক অবসাদের প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা বা চরম জলবায়ুতে অবস্থানরত সেনারা দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটান, যা মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০২3 সালের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রায় ১,200 জন আত্মহত্যা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেনা সদস্যদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করা গেলে এই প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়।

পরিবারে শোকের ছায়া, সহকর্মীদের হতবাক প্রতিক্রিয়া

নিহতের তেলেঙ্গানার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে দুঃসংবাদ। পরিবার এখনো মেনে নিতে পারছে না যে, তাদের প্রিয়জন এমনভাবে বিদায় নিলেন। সহকর্মীরাও হতবাক। তারা বলছেন, "তিনি দায়িত্ববান এবং স্বাভাবিক আচরণ করতেন। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত।"

শেষ কথা

কাশ্মীর সীমান্তে বারবার ঘটে যাওয়া এই ধরনের সেনা মৃত্যুর ঘটনা যেন শুধু সংখ্যা নয়—প্রতিটি জীবনের পেছনে রয়েছে একটি পরিবার, একটি সমাজের স্বপ্ন। যে যেভাবেই এই মৃত্যু ব্যাখ্যা করুক, এটি এক গভীর সংকেত—যা বলে দেয় সীমান্তে শুধু শত্রু নয়, সেনারা লড়ছে নিজেদের মানসিক যুদ্ধের সাথেও।

এই মৃত্যু কী সত্যিই আত্মহত্যা, না কি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো ঘটনা—সেটি সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এমন মৃত্যু শুধু একটি জীবন শেষ করে না, প্রশ্ন তোলে গোটা ব্যবস্থাপনাকে নিয়েই।

Aucun commentaire trouvé