কারামুক্তির পর ‘নায়েবে আমির’? জামায়াতের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এটিএম আজহারুল ইসলাম!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে খালাস পাওয়ার পর এটিএম আজহারুল ইসলামের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জমে উঠেছে আলোচনা। তিনি কি হবেন জামায়াতের নতুন মুখ? দায়িত্বশীল পদ কি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য? উঠে এল অভ্যন্তরীণ গঠনপ্র..

দীর্ঘ ১৩ বছর পর কারামুক্ত হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেছেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগ থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার পর তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বিশেষত, তিনি জামায়াতের আমির হতে চলেছেন কি না, এ নিয়ে গুঞ্জন দানা বাঁধছে বিভিন্ন মহলে।

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজহারুল ইসলামকে খালাস দিলে পরদিনই শাহবাগে তাঁকে সংবর্ধনা দেয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। এরপর দলের মগবাজার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। সূত্র জানায়, সেখানে তাঁকে একটি পৃথক কক্ষও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে কোনো পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

তবে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এটিএম আজহার কারাবন্দি থাকা অবস্থাতেই দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন। ফলে তাঁর সাংগঠনিক গুরুত্ব ছিল আগেও, এখনও আছে।

এই খালাসের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন—এটিএম আজহার হতে যাচ্ছেন জামায়াতের আমির। তবে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই মুহূর্তে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।

তারা জানান, জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন রুকন বা শপথগ্রহণকারী সদস্যদের সরাসরি ভোটে। বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এ বছরের শেষ দিকে নতুন আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তাঁরা আরও জানান, আমির নির্বাচনের আগে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়, যা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারণ করে মজলিসে শূরা। এরপর সেই তিনজনের তালিকা পাঠানো হয় সারা দেশের রুকনদের কাছে, যাঁরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে গোপন ভোটে নির্বাচিত করেন। এই তিনজনের বাইরে থেকেও রুকনরা যে কাউকে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা করে সর্বাধিক ভোট পাওয়া ব্যক্তিকে আমির ঘোষণা করে।

এই পদ্ধতি অনুযায়ী এটিএম আজহারুল ইসলাম যদি আমির হতে চান, তাঁকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগোতে হবে।

তবে, দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, এটিএম আজহারুল ইসলামকে খুব শিগগিরই জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে দলের তিনজন নায়েবে আমির আছেন—সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আ ন ম শামছুল ইসলাম। গঠনতন্ত্রে এই পদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ নেই—লেখা আছে ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক’।

২০১১ সালের ২২ আগস্ট রাতে রাজধানীর বড় মগবাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন এটিএম আজহার। তখন তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দলের প্রয়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেফতার হওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালের ২৮ মে তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। সর্বসম্মত রায়ের ভিত্তিতে তিনি মুক্তি পান।

এখন দেখা যাক, জামায়াতের ভেতরে আজহারের গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক গুরুত্ব কোন দিকে মোড় নেয়। তিনি কি আসলে হবেন নায়েবে আমির, নাকি আগামী নির্বাচনে আমির হওয়ার দৌড়ে অন্যতম মুখ হয়ে উঠবেন—সে উত্তর সময়ই দেবে।

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator