১৪ বছরের দীর্ঘ কারাবন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। আজ বুধবার (২৮ মে) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সকালের আলো ছুঁয়ে যাওয়ার মুহূর্তে রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও সূচনা হলো নতুনভাবে। মুক্তির ঠিক পরপরই তিনি শাহবাগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে উপস্থিত দলের নেতাকর্মী ও অনুসারীদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো ছিল।
‘আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, “১৪ বছর কারাভোগের পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন।” তার কণ্ঠে ছিল ক্লান্তি, তবে তাতে আচ্ছাদিত ছিল এক অদম্য প্রত্যয়ের ছোঁয়া।
তিনি আরও বলেন, “এখানে সড়ক আটকে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। জনগণের যেন ভোগান্তি না হয়। এখন আর কথা বলব না, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে বারবার দেখা হবে, বারবার কথা হবে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যেমন তার অনুভূতির প্রকাশ ঘটান, তেমনি জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে সচেতন থাকার বার্তাও দেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমেই মুক্তির পথ খুলে যায়
এর একদিন আগেই, গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে), সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করেন। সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ, যার নেতৃত্ব দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন এবং তাকে খালাস প্রদান করেন।
এই রায়ের পরপরই মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কারা কর্তৃপক্ষ রায় হাতে পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র সম্পন্ন করে এবং সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন, এটি তাদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্গঠনের এক নতুন অধ্যায়। অন্যদিকে বিরোধীরা বিষয়টিকে দেখছেন বিচার ব্যবস্থার উপর রাজনৈতিক প্রভাবের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হিসেবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে— এটিএম আজহারুল ইসলাম রাজনীতির ময়দানে আবার সক্রিয় হবেন কিনা। তার নিজ বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি এই মুহূর্তে বিশ্রাম চান, তবে ভবিষ্যতে আবার দেখা ও কথা বলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
১৪ বছরের দীর্ঘ কারাজীবন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নাটকীয় মোড় এবং শাহবাগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থবহ বক্তব্য— সব মিলিয়ে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি বর্তমান রাজনীতির এক আলোচিত পর্ব হয়ে উঠেছে। সময়ই বলে দেবে তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অভিমুখ কোন দিকে মোড় নেবে।