থাইল্যান্ড পালাতে গিয়ে গ্রেফতার, কারাগারে প্রেরণ—ঢালিউড তারকা নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় চাঞ্চল্য
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া এবার আইনের কঠিন মুখোমুখি। ভাটারা থানার একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে তাকে ভাটারা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে এবং জামিন শুনানির জন্য আগামী ২২ মে তারিখ ধার্য করেছে।
সোমবার (১৯ মে) সকালে নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে জানান, "ফারিয়া একটি সংগঠিত ষড়যন্ত্রের সহযোগী। তিনি জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে অর্থ সহায়তা করেছেন।"
গোপন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও সন্দেহজনক ভূমিকা
জুলাই-আগস্টে ঢাকায় সংগঠিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ফারিয়ার নাম উঠে আসে। মামলাটি করেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি, যেখানে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ব্যক্তি এবং আরও তিন-চারশ’ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হয়।
মামলায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এ কারণে তাকে "ষড়যন্ত্রকারী ও মদদদাতা" হিসেবে বিবেচনা করে মামলার আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
আসামির তালিকায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের আরও পরিচিত মুখ
এ মামলায় শুধু নুসরাত ফারিয়াই নয়, আরও জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অপু বিশ্বাস, ভাবনা (আশনা হাবিব ভাবনা), ও অভিনেতা জায়েদ খানসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, ঢাকাই চলচ্চিত্র জগতেও মারাত্মক আলোড়ন তুলেছে।
তদন্ত কর্মকর্তা, ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল ভূঁইয়া আদালতে জানান, "ফারিয়াকে তদন্ত চলাকালে কারাগারে আটক রাখা জরুরি, যাতে তিনি প্রমাণ নষ্ট বা প্রভাব খাটাতে না পারেন।"
প্রশ্ন উঠছে: রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, নাকি পরিকল্পিত গ্রেফতার?
জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—এটি কি শুধুই একটি আইনি প্রক্রিয়া, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? ফারিয়ার কাছের বন্ধু ও শিল্পী মহলের অনেকেই দাবি করছেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও শক্ত ভিত্তি নেই, এটি একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা হতে পারে তাকে হেয় করার জন্য।
তবে তদন্ত সংস্থা ও রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্যমতে, ফারিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট, যার ভিত্তিতেই আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আগামী ২২ মে গুরুত্বপূর্ণ দিন
ফারিয়ার আইনজীবীরা জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। আগামী ২২ মে জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিনই বোঝা যাবে তিনি সাময়িক মুক্তি পাচ্ছেন কিনা, নাকি তাকে আরও দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।
এই ঘটনা এখন পুরো দেশের নজরে। ঢালিউড ও রাজনীতির সংযোগ এবং এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
আপনার মতামত জানান: আপনি কি মনে করেন, নুসরাত ফারিয়া সত্যিই দোষী, নাকি এটি একটি সাজানো মামলা?